শনিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বারোমাসি কাটিমন জাতের আম চাষ কৃষককে দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৩৮ অপরাহ্ন, ১২ই এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

এখন থেকে সারা বছরই নেওয়া যাবে মিষ্টি মধুর রসালো রাজশাহীর কাটিমন আমের স্বাদ। কৃষি নির্ভরশীল এই দেশে ধরাবাঁধা নিয়মের পরম্পরা ভাঙতে শুরু করেছে- আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান। চাষবাষ নিয়ে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাশীলতা বিকশিত হচ্ছে।

মিশ্র চাষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এক জমিতে ফলছে হরেক রকম ফল ও ফসল। অসময়ের ফসল ফলছে সারা বছরই। তাই নতুন নতুন সব চাষ পদ্ধতি কৃষকদের দেখাচ্ছে- নতুন দিনের স্বপ্ন। আর এ যেন স্বপ্ন নয়, সফল কৃষি গাঁথা।

বর্তমান কৃষি বিজ্ঞান এমন এক জাতের আমের সঙ্গে কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে- যে আম চাষ করা যায় বারোমাসই। এতে উৎপাদন ও লাভ দুটোই বেশি। তাই অনেকেই এখন নতুন এই জাতের আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

গত দুই বছর থেকে নতুন জাতের এক বারোমাসি আম চাষ করা হচ্ছে রাজশাহীতে। আমটির নাম কাটিমন। কৃষি বিভাগ বলছে- একদম নতুন জাতের আম হওয়ায় বর্তমানে রাজশাহীর ৯ হেক্টর জমিতে কাটিমন আমের চাষ হচ্ছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা উপজেলার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমের মৌসুমে সব জাতের আম বাজারে আসে। তবে কাটিমন জাতের আম মৌসুম ছাড়াও বাকি সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছে ধরে। এতে চাষিদের লাভের অংক বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, গত দুই বছর থেকে রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলার প্রায় নয় হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কাটিমন জাতের বারোমাসি আম চাষ করা হচ্ছে। আমের বাগানগুলোতে নিয়মিত পরিচর্যা করায় আশানুরূপ আমের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমের পরও গাছে আম ধরায় অসময়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কাটিমন। এতে চলতি বছর স্থানীয় চাষিদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে কাটিমন আমের বাগান করতে জমি নির্বাচন কাজ শুরু করেছেন।

কাটিমন আম তাই এখন কৃষকের সফলতারই ফসল। কাটিমন আমটি দেখতে সাধারণত লম্বাটে আকারের। এটি পাকলে আকর্ষণীয় হলুদ বর্ণের রং ধারণ করে। কাটিমন আমের বিশ্বজোড়া খ্যাতি কেবল তার মিষ্টতার জন্যই। দারুণ মিষ্টি। আর আমে আঁশ নেই বললেই চলে। বারোমাসি এই আম কাঁচা খেতে যেমন মিষ্টি তেমন পাকলেও। আমের আঁটি তুলনামূলক ছোট। প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম। সাড়ে পাঁচ বছর বয়সের এক একটা গাছে দেড় মণেরও বেশি আম ধরে।

এটি থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। একই গাছে এক সঙ্গে মুকুল, গুটি ও পাকা আম থাকে। অনেক সময় বেশি পর্যায়ের মুকুল বা আমও থাকে। নাবি জাতের এই আম চাষে চমক দেখিয়েছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম। তার বাগানে ঝুলছে গাছ ভর্তি কাটিমন আম। আর নিচে পুকুরে চাষ হচ্ছে রূপালি মাছ ও পুকুরপাড়ে হচ্ছে রঙিন আম।

এ উদ্যোক্তার মতে জ্যৈষ্ঠ মাসে জাতের আম উৎপাদনের চেয়ে এই কাটিমন আমেই লাভ বেশি। গাছে ফলন আসতে সময় নেয় কম। তবে পরিচর্যাও করতে হয় অন্য গাছের তুলনায় বেশি। তাই কার্তিকেও যেন আমের ভরা মৌসুম এখানে। তার মাছ চাষের জন্য তৈরি পুকুরপাড়ে লাগানো হয়েছে সারি সারি কাটিমন আম গাছ। তিন বছর আগে লাগানো হয়েছিল এই গাছ। আর গাছ লাগানোর মাত্র কয়েকমাস পরই ফলন দিতে শুরু করেছে।

আরো পড়ুন: ১০ কোটি টাকার সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন তুলা চাষীরা

আম গাছের বাগান মালিক রফিকুল  ইসলামের মতে, বছরে তিনবার ফলন দেয় বলে এ গাছ পরিচর্যায় শ্রমিক বেশি প্রয়োজন। মূলত কম জায়গায় ঘন করে সহজেই বছরে একাধিকবার উৎপাদন করা যায় সুমিষ্ট কাটিমন আম। রাজশাহীতে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদনের বড় বড় বাগান থাকলেও কাটিমন জাতের আম বাগানের সংখ্যা খুব কম।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এটা নতুনভাবে থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি বারোমাসি আমের জাত। দুই বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এই আম চাষ হচ্ছে। তাদের ফল গবেষণা কেন্দ্রে এই জাতের আমের বেশ কয়েকটি গাছ রয়েছে। মৌসুম শেষেও অমৌসুমে বেশ কিছু আম পাওয়া যাচ্ছে।

এসি/  আই.কে.জে

সুস্বাদু কাটিমন আম

খবরটি শেয়ার করুন