রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** মোদি-ইউনূসের ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় *** করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ, সতর্কতার পরামর্শ সরকারের *** শহীদদের নামে কোরবানি ও মাংস বিতরণ করেছে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স *** সরকার দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে আন্তরিক: প্রধান উপদেষ্টা *** টিউলিপের কোনো চিঠি পাইনি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব *** সীমিত পরিসরে চলছে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাসেবা *** বলিউডে অভিষেক হচ্ছে আমির খানের মা জিনাত হুসেনের *** কিরগিজস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেকে সরানো হলো লেনিনের ভাস্কর্য *** নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা পার্টির’ ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক *** নেইমারের বিয়ে নিয়ে রহস্যময় মন্তব্য আলোচিত সেই প্রেমিকার

‘জুতার মালা’ পরানো আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:০৮ অপরাহ্ন, ২৬শে ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ৭৮ বছর বয়সী আব্দুল হাই কানু নামে একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনা দেশ-বিদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত রোববার দুপুরে উপজেলার কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে হেনস্তার শিকার আব্দুল হাই কানু জানিয়েছেন। ওই ঘটনার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে একা পেয়ে স্থানীয় অন্তত ২০ ব্যক্তি তাকে হেনস্তা করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করে। তাদেরই একজন ঘটনার ভিডিও করে। দুই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা কানুর হাত টেনে সামনে নিয়ে যাচ্ছে। কানুর গলায় রশি দিয়ে বাঁধা কয়েকটি জুতা দেখা যায়। সেদিন রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। চারদিকে ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলেও আওয়ামী লীগ আমলেও নির্যাতিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক একজন মন্ত্রীর রোষানলে পড়ে বিগত ৮ বছর এলাকায় যেতে পারেননি। তখন তার বাড়িঘরে হামলা করাসহ একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদ মনে করে সম্প্রতি তিনি বাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু এবার ঘরে ফিরেও রক্ষা পেলেন না। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের আক্রমণের শিকার হলেন। এ বিষয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন,‘আমার বেশি কিছু বলার নেই। মানুষের স্বাধীনতার জন্য দেশ স্বাধীন করেছি, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল আজও পাইনি। চৌদ্দগ্রামের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মুজিবুল হকের অনিয়ম, অত্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আট বছর বাড়িতে আসতে পারিনি। আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। বর্তমান সময়ে ভেবেছিলাম অন্তত বাড়িতে ঘুমাতে পারব। সেই আশা মনে হচ্ছে পূরণ হবে না। তাহলে কার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম? এভাবে জুতার মালা পরার জন্য অবশ্যই নয়।’

একটি পক্ষ হামলা ও নির্যাতনকারীদের নিয়ে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের অভিযোগ, আবদুল হাই কানু আওয়ামী লীগের আমলে এলাকার অনেকের ওপর নির্যাতন ও জবরদস্তি করেছেন। অভিযোগ যদি সত্যও হয়, সেজন্য আইন ও আদালত রয়েছে। ভুক্তভোগীরা সেসব নির্যাতন ও জবরদস্তির বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকারের জন্য পুলিশের কাছে বা আদালতে যেতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে কেউ অপরাধ করলে তার বিচারের দায়িত্ব কোনো সাধারণ ব্যক্তি বা জনতা নিতে পারে না। রাষ্ট্র এই এখতিয়ার তাদের কাউকে দেয়নি। একজন নাগরিক যাতে কোনোভাবে অবিচার ও জুলুমের শিকার না হন, সেজন্য রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে, আইন আদালত তৈরি হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের এ ধরনের অপমান এটাই প্রথম নয়, অতীতেও ঘটেছে। একাত্তরে যারা জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, স্বাধীন দেশে তাদের এমন অপমান ও নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

জুতার মালা পরিয়ে কাউকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হোন কিংবা সাধারণ নাগরিক বা দাগী আসামি হোন, যে কোনো নাগরিকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার এখতিয়ার কেউ রাখে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যক্তির মর্যাদার যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। যখন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বয়োবৃদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধা এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হতে পারেন, তখন সাধারণ নাগরিকের মর্যাদা কতটা সুরক্ষিত, সেটা তো সহজেই অনুমেয়।

এ ধরনের ঘটনা আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি। যখন আইনের শাসন দুর্বল হয়, তখন অপরাধীরা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। সরকার নিন্দা জানিয়েছে, দোষীদের গ্রেফতারদের নির্দেশ দিয়েছে, তবু এখনোও প্রকৃত অপরাধীরা গ্রেফতার হয়নি। তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আই.কে.জে/  

জুতার মালা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন