সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে গরুর কৃত্রিম প্রজননে বড় সাফল্য

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:০০ পূর্বাহ্ন, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

কৃত্রিম প্রজননের জন্য দেশে এক সময় বিদেশ থেকে গবাদি পশুর সিমেন বা বীজ আমদানি করা হতো। উৎপাদন সক্ষমতা ছিল কম। গত দুই যুগে এ অবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে বাংলাদেশে এখন সিমেনের উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার চেয়ে বেশি।

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে প্রায় এক কোটি দশ লাখ গাভি ও বকনার (মাদি বাছুর) মধ্যে প্রজননক্ষম ৮০ লাখ। এদের জন্য প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ ডোজ সিমেন প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) উৎপাদন সক্ষমতা ৪৫ থেকে ৫০ লাখ ডোজ সিমেন। বেসরকারি ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও দুটি এনজিও মিলে সিমেন উৎপাদন সক্ষমতা আরও প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ডোজ। পাশাপাশি প্রজননের জন্য আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ ডোজ সিমেন প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এখন সিমেনের আর কোনো ঘাটতি নেই।

দেশে প্রথম গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন শুরু হয় স্বাধীনতার পরে। ১৯৭৩ সালে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২৫টি ফ্রিজিয়ান ও জার্সি জাতের ষাঁড় অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে সরকারিভাবে যাত্রা শুরু হয় কৃত্রিম প্রজননের। বেসরকারিভাবে ১৯৮৭ সালে এসে সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে সীমিত পরিসরে সিমেন উৎপাদন শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। পরবর্তী সময়ে ব্র্যাক ১৯৯৮ সালে বুল স্টেশন চালু করে, যারা দুই বছর পরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। ওই সময় পর্যন্ত দেশে সিমেনের উৎপাদন পাঁচ থেকে সাত লাখের বেশি ছিল না।

কৃত্রিম প্রজননে বড় সাফল্য এসেছে সবশেষ দুই যুগে। এর মধ্যে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উৎপাদন। প্রতিষ্ঠানটি সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র ও দুগ্ধ খামার এবং রাজশাহীর কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরিসহ সারা দেশে আরও আটটি প্রজনন কেন্দ্র সিমেন উৎপাদন করছে। এসব কেন্দ্রে প্রত্যায়িত ষাঁড়ের সংখ্যা ১৯৪টি। যার মধ্যে সাভারে রয়েছে ১২৩টি। এখান থেকে এ পর্যন্ত ছয় কোটি ৬২ লাখ ডোজ সিমেন সংগ্রহ করা হয়েছে। গত বছর (২০২৩) উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ডোজ।

কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে দেশে দুধ উৎপাদনে বড় সফলতা এসেছে। ভালো জাত তৈরি হচ্ছে। তারপরেও আমাদের দুধের ঘাটতি রয়েছে। তবে এভাবে কৃত্রিম প্রজনন হতে থাকলে এক সময় দেশে সে ঘাটতি মেটানো সম্ভব। 

আরো পড়ুন : আধুনিক প্রযুক্তিতে লাউ চাষে সফল তিন ভাই

ব্র্যাকের ময়মনসিংহ ও বগুড়ায় নিজস্ব বুল অ্যান্ড ব্রিডিং স্টেশনে সর্বমোট প্রজনন সক্ষম ষাঁড় রয়েছে ১৭৫টি। যার মধ্যে প্রত্যায়িত ষাঁড় ১৪২টি। গত বছর ব্র্যাক তরল সিমেন উৎপাদন করেছে ৪০ লাখ ডোজ। প্রতিষ্ঠানটির চার হাজার কর্মী ৬৪ জেলায় এখন খামারিদের বাড়ি গিয়ে কৃত্রিম প্রজননে সহায়তা করে।

তরল সিমেনের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন সেবার ফলে দেশি গরুর জাত উন্নয়ন প্রক্রিয়া কিছুটা গতি লাভ করলেও এই তরল সিমেনের সংরক্ষণ ও গুণগত মান রক্ষা করা কঠিন ছিল। তাই গুণগত মানের কৃত্রিম প্রজনন সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০০ সালে ব্র্যাক নিজস্ব বুল স্টেশনে হিমায়িত সিমেন উৎপাদন শুরু করে। এখন ক্রমাগত আমাদের উৎপাদন বাড়ছে।

সিমেন উৎপাদনে পরবর্তী অবস্থানে এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স। গাজীপুরের রাজাবাড়িতে ১২০টি ষাঁড় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বুল স্টেশন। যেখানে আছে শাহিওয়াল, ফ্রিজিয়ান ও রেড চিটাগাং। বিদেশি জাতগুলো আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এসব ষাঁড় দিয়ে বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৪০ লাখ ডোজ সিমেন উৎপাদন করতে পারে। গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ডোজ।

প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজননের বিকল্প নেই। কারণ আমাদের পর্যাপ্ত গাভি থাকলেও সেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। যে কারণে বিশ্বের অধিক দুধ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মতো গাভির সংখ্যা সীমিত রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, যা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সম্ভব।

কৃত্রিম প্রজননে সুফল কেমন

আমাদের দেশে দুধের উৎপাদন বাড়াতে গেলে কৃত্রিম প্রজননের বিকল্প নেই। কারণ দেশি জাতের গরুগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা কম। আবার দেশে গরু রয়েছে পর্যাপ্ত। ফলে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গরুগুলো অধিক উৎপাদনশীল করতে চায় সরকার।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যত গাভি রয়েছে, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়ও এত গাভি নেই। তারপরেও আমাদের দুধের উৎপাদন সেসব দেশের তুলনায় অনেক কম। কারণ প্রচলিত জাতগুলো বেশি দুধ দিতে সক্ষম নয়।’

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে দেশে দুধ উৎপাদনে বড় সফলতা এসেছে। ভালো জাত তৈরি হচ্ছে। তারপরেও আমাদের দুধের ঘাটতি রয়েছে। তবে এভাবে কৃত্রিম প্রজনন হতে থাকলে এক সময় দেশে সে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।’

দেশের ৯ জেলায় (ঠাকুরগাঁও, রংপুর, পাবনার ঈশ্বরদী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও সিলেট) কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের অফিস নির্মাণ ও দুটি অফিস সংস্কার করার প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়া ঢাকার সাভারের সরকারি খামারে ৪৮টি শতভাগ ফ্রিজিয়ান বকনা দেওয়া হয়েছে। আরও ছয়টিতে দেওয়া হয়েছে (চট্টগ্রামের হাটহাজারি, সিলেট, বরিশাল, ফরিদপুর, বগুড়া ও রাজশাহী ফার্ম) ৩০টি করে লোকাল ক্রস ব্রিড। কৃত্রিম প্রজনন বা জাত উন্নয়নে ৫০ হাজার গাভির ডাটাবেজও তৈরি করা হচ্ছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

এস/ আই.কে.জে/ 


গবাদিপশু কৃত্রিম প্রজনন

খবরটি শেয়ার করুন