সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসা মহান সেবা, কোনো বাণিজ্য নয়

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:২৯ অপরাহ্ন, ১১ই ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

চিকিৎসা একটি সেবামূলক পেশা এবং স্বাস্থ্যসেবা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। মানব সেবার অন্যতম সেবক চিকিৎসক, যিনি আমাদের সমাজে ডাক্তার নামে পরিচিত। সেবার মানসিকতায় একজন ডাক্তার নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত করেন। তাদের সঠিক নিবিড় পরিচর্যা ও সঠিক নির্দেশনায় একজন অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে এই মহান পেশাটা অনেক ক্ষেত্রে সেবার নামে বাণিজ্যে পরিণত হচ্ছে। অর্থ উপার্জনই যেন প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের মন নেই। গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে রোগীদের গলা কাটা হচ্ছে। আবার অনেক ডাক্তার আছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ ডিগ্রির অজুহাতে রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভিজিট হাতিয়ে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায়ে ভালো চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়নি বলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এই সুযোগে শহরে ব্যাঙয়ের ছাতার মতো প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার চেয়ে বাণিজ্যিক দিকটাই প্রকট হয়ে উঠছে।

মানুষের বাঁচার জন্য পাঁচটি মৌলিক চাহিদা হলো-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এগুলোর মধ্যে চিকিৎসা অন্যতম। চিকিৎসা মানুষের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এক কথায়, জীবনকে বিপন্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়াই হলো চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে নামি ডাক্তার এবং দামি হাসপাতাল না হলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া সাধারণ ঠান্ডা-কাশি হলেও আমরা অর্থ খরচ করে ডাক্তারের পেছনে দৌড়াতে পছন্দ করি।

জনগণের করের টাকাতেই কিন্তু একজন ডাক্তার তৈরি হন। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে তাদের মেডিকেল কলেজে পড়ানো হয়। কিন্তু ডাক্তার হয়েই তারা ভিজিট ছাড়া রোগী দেখেন না। ভিজিট নেয়াটা যদিও তাদের অধিকার, তবে সঠিক চিকিৎসা প্রদানও তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারি হাসপাতালগুলোতে নামমাত্র খরচে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা থাকলেও, সেখানে ডাক্তারদের মন নেই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে আসতে হয়। আর প্রাইভেট হাসপাতালে চলে টাকার খেলা। সেখানে চলে চিকিৎসা বাণিজ্য। উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসা কেন্দ্র ও সদর হাসপাতালগুলোতে থাকে না পর্যাপ্ত চিকিৎসক।

মূলত সরকারি হাসপাতালের আশপাশেই গড়ে তোলা হয় ক্লিনিকগুলো। বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসকরাই রোগী দেখেন সেসব ক্লিনিকে। এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশিরভাগেরই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেই। বর্তমানে বেশকিছু প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নানা সমালোচনার মধ্যেও সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণির চিকিৎসকের সহায়তায় ক্লিনিক মালিকদের টেস্ট বাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদানের ফলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু ঘটে। রোগী মারা যাওয়ার পর লাশ আটকে রেখে টাকা আদায়ের ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে।

মানুষ নিরুপায় হয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকই রোগীর এই দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে বেছে নেন। তখন টাকার নেশায় অপ্রয়োজনীয় টেস্ট  ও ঔষধ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় রোগী তাদের অবহেলার কারণে মারা যায়। এমন সংবাদ গণমাধ্যমে আসার পর প্রশাসন একটু নড়ে চড়ে বসে। তখন দু-একটা ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। এরপরই আবার আগের নিয়মে চলে সব। এসব অনিয়ম বন্ধে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে চিকিৎসা একটি মহান সেবা, কোনো বাণিজ্য নয়।

আই.কে.জে/

চিকিৎসা সেবা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন