ছবি : সংগৃহীত
বাড়তি ওজন নিয়ে সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। আর ওজন বেড়ে গেলে শুধু চলাফেরায় নয়, আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ডেকে আনতে পারে শারীরিক সমস্যাও।
বাড়তি ওজন শুধু শারীরিক নয় বিভিন্ন মানসিক ও সামাজিক সমস্যারও কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাই আমরা বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ দেহ আর কাঙ্ক্ষিত ফিগার পেতে চাই।
এটা সত্যি, চাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কার্পণ্য নেই। তবে সমস্যা দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত সেই গোলে যেতে আমরা যে পথ অবলম্বন করি সেখানে।
এটা বলছি এজন্য যে, আমরা ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম যা করি তা হচ্ছে খাবার নিয়ন্ত্রণ। আমাদের বাড়তি ওজনের জন্য যত শত্রুতা যেন শুধু খাবারের সঙ্গে। কয়েক দিন না খেয়ে থেকে অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে যাই, আর কেউ কেউ এক সপ্তাহেও কোনো পরিবর্তন না দেখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে আবার আগের মতোই খেতে শুরু করেন।
অতএব ফলাফল হয় শূন্য। আসুন তিন মাস টার্গেট নিয়ে চেষ্টা করি ওজন কমানোর। এ তিন মাস একটু কষ্ট হলেও নিয়মগুলো মেনে চলি, তারপর ওজন মেপে দেখি।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কয়েকটি টিপস সহজভাবে জেনে নেই:
আরো পড়ুন : ঋতু উপযোগী চুলের যত্ন নিন
প্রচুর পানি পান করুন
প্রতিবার খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে একগ্লাস পানি পান করুন। উচ্চ শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য যেমন- চাল, আলু নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে। কম ক্যালরিযুক্ত তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে পারেন।
প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন। সাধারণ চা বা কফির পরিবর্তে সবুজ চা পান করুন। শসা ও ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় টক ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে। তিতা স্বাদযুক্ত সবজি বিশেষ করে করলা বাড়তি ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকর। মসলা জাতীয় খাবার যেমন: আদা, দারুচিনি, কালো মরিচ ওজন কমাতে সাহায্য।
যা খাবেন না
খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ খেলে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। উচ্চ ক্যালরি ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। মিষ্টি শরবত, কোমল পানীয়, সব রকম মিষ্টি, তেলে ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, শুকনা ফল, ঘি, মাখন, পনির, দুধের সর এসব খাবার যত পছন্দেরই হোক বাদ দিতে হবে। রাতে খাবারের পর অনেকেই অতিরিক্ত কিছু খেতে পছন্দ করেন।
অপ্রয়োজনীয় এ খাবারটুকু একদম বাড়তি ওজন যোগ করে। আমাদের শরীরে কোনো সফলতা সেলিব্রেট করার সময় পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে খাবার খাওয়ার প্ল্যান বাদ দিয়ে বরং কোথাও ঘুরে আসুন।
পর্যাপ্ত ঘুম
গবেষণা বলছে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বডি মাস ইন্ডেক্স (বিএমআই) বেড়ে যেতে পারে। আর বডি মাস ইনডেক্স বেড়ে যাওয়ায় অর্থ ওজন বৃদ্ধি।
চিকিৎসকদের মতে, এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ছয় ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম পর্যাপ্ত হলে শুধু ভেতর থেকে ফিট থাকবে শরীরও। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজনও।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে খাওয়া-দাওয়ার ওপরেও। এসব কিছুই ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। কাজেই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ওজন কমানোর জন্যেও অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে পরামর্শ নিতে পারেন মনোবিদের।
কায়িক শ্রম, ব্যায়াম
একটি কথা মনে রাখা দরকার, শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণই আমাদের ওজন কমাতে পারে না। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে যদি ৫০০ ক্যালরি কমাতে পারি তাহলে ওজন কমে প্রতি সপ্তাহে আধা কেজি। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে হাঁটুন, সাইকেল চালান অথবা সাঁতার কাটলে দেখবেন ওজন কমবে দুই গুণ। তবে যারা কায়িক শ্রম বেশি করেন তাদের ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। সময়ের অভাবে যারা আলাদা করে এক্সারসাইজ করতে পারেন না, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসেই কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিন। আর কাছাকাছি দূরত্বে কোথাও যেতে হলে হেঁটে যান, ওপরে উঠতে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়িতে চলুন। এক গ্লাস পানি বা প্রিন্ট দেওয়া কাগজ আনতে কাউকে না বলে নিজেই উঠে গিয়ে নিয়ে নিন।
শরীরের বাড়তি ওজন এক সপ্তাহে বাড়েনি, তাই খুব অল্প দিনে কমে যাবে এটা ভাবা ঠিক নয়, দীর্ঘ তিন মাসের পরিকল্পনা করুন, ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন স্বপ্নের সেই হারানো কাঙ্ক্ষিত ফিগার পেয়ে যাবেন মাত্র তিন মাসে।
এস/ আই.কে.জে