ছবি - সুখবর ডটকম
চর্যার ২৮ সংখ্যক পদে বলা হয়েছে, “উচা উচা পাবঅ তাটহী বাসহী সাবরী বাআলী, মোরাঙ্গী পুচ্ছা পারিহীন সাবরী গীবত গুঞ্জরী মাআলী”। অর্থাৎ, উঁচু পাহাড়দেশে সবরী বালিকাদের বসবাস ছিল। এই পদেরই একাংশে সবর-সবরীদের মদ্য পান করে আনন্দে মত্ত থাকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আবার তাদের বসবাস সম্পর্কে চর্যার ৫০ সংখ্যক পদে পদকর্তা শবর পা বলছেন, “গঅণত গঅণত তইলহা বাড্ডী হেঞ্ছে কুড়াড়ী, কণ্ঠে নইরামনি বাআলী জাগন্তে উপাড়ী”। অর্থাৎ, আকাশচুম্বী টিলায় মোহমুক্ত জীবনযাপন করছে সবর-সবরীগণ।
এই পদেই শবর পা বাড়ির পাশের কার্পাস ফুলের কথা খুব চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে আমরা তখনকার দিনে যে কার্পাসের চাষ ছিল সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারি। চর্যার ৩৩ সংখ্যক পদে ঢেন্ঢন পা বলছেন, “টালত মোর ঘর নাহি পড়েবষী, হাড়িত মোর ভাত নাহি নিতি আবেশী”। অর্থাৎ, আমার কোনও ঘর-দুয়ার নেই, থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই অথচ প্রতিবেশি আর অতিথির নিত্য আনাগোনা। কতো সুন্দর ও সহজ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আবার নিজের সৌন্দর্য যে অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা চর্যা ভাবসাধক খুব দক্ষতার সাথে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পদকর্তা বলেছেন, “আপনা মাংসে হরিণা বৈরি”। অর্থাৎ, নিজের শরীরের মাংস হরিণের জন্য কালসম। আবার, চর্যার ১২তম পদে দাবা খেলার বর্ণনার মধ্যদিয়ে খুব চমৎকারভাবে সমাজ-রাজনীতির অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। চর্যার ১৮ সংখ্যক পদে পদকর্তা লীলা রসে মেতে থাকার যে সুখ তার আলোকপাত করেছেন। এখানে ডোম্বিকে কামরসের এক হিংস্র মূর্তিরুপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মোটকথা, চর্যাপদে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলো চমৎকারভাবে রূপায়ন করা হয়েছে। তবে বাঙালির এই আদি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সব কিছুই বর্ণিত হয়েছে রূপকের আশ্রয়ে। এতে তখনকার ভাবসাধকদের অমূল্য জীবনবোধ ও চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।