বুধবার, ২রা এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে নতুন বাংলাদেশে উগ্রবাদ উত্থানের প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে *** নিউইয়র্ক টাইমসের আলোচিত নিবন্ধ নিয়ে যা বলছে সরকার *** সবাই মিলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: খালেদা জিয়া *** শুল্ক নিয়ে কাল কী ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প *** চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে যা হচ্ছে ভারতে *** তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশজুড়ে বৃষ্টির কথা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর *** প্রধান উপদেষ্টাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শাহবাজ শরিফের ফোন *** অধ্যাপক ইউনূসকে নরেন্দ্র মোদির ঈদের শুভেচ্ছা *** দেশে এখন শান্তি ফিরিয়ে আনা জরুরি: প্রধান উপদেষ্টা *** এনসিপির সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত বিএনপির!

বাউলের চর্যাগান—চর্যাপদে আধ্যাত্মবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৯ অপরাহ্ন, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

#

রবিউল হক

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে বহন করা প্রাচীন চর্যাগানের প্রতিটি পদ তৎকালীন সামাজিক, সাংস্কৃতিক চিত্র ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক দর্শনে পরিপূর্ণ। চর্যাপদ পঠন-পাঠন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা দখেতে পাই প্রথম পদেই লুই পা রূপকের আশ্রয়ে দেহতত্ত্ব সম্পর্কে চমৎকার বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল, চঞ্চল চিএ পইঠ কাআল”। অর্থাৎ, শরীর গাছে পাচ খানি ডাল, অধীর মনে ঢুকে পড়ে কাল। চর্যা ভাবসাধক লুই পা পাঁচখানি ডাল দ্বারা মানবদেহের পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের কথাই বলছেন, যেখানে অস্থিরমনা চিত্তে সময় বা কালের দ্রুত  প্রবেশ ঘটে।

লুই পা আরো বলছেন, “দৃঢ়হ করিঅ মহাসুহ পরিমাণঅ,ভনই লুই গুরু পুচ্ছিঅ জানঅ”। অর্থাৎ, তোমার সুখের পরিমাণ কতকাল ব্যাপী স্থায়ী হবে সে সম্পর্কে অজ্ঞ না থেকে গুরুর কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও। এ কোনো সাধারণ কথা নয়। গভীর নিগূঢ় তত্ত্ব এই বাণীর ভিতর লুকিয়ে আছে। চর্যার ১৬ সংখ্যক পদে মহীন্ডা বা মহিধর পা বলেছেন, “তিন এ পাটে লাগেলি রে অনহ কসন ঘন গাজই, তা সুনি মার ভয়ঙ্কর রে সএ মণ্ডল সএল ভাজই”। অর্থাৎ, যখনই মনকে মোহমুক্ত করে তিন পাট বন্ধ করা হয় তখনই কালো মেঘে ছেয়ে আসে চারপাশ।

আরও পড়ুন : বাউলের চর্যাগানে অসাম্প্রদায়িক চেতনা

ত্রিবেণী বোঝাতেই পদকর্তা তিন পাট শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ তিনের ব্যবহার বাউল সাধকগণের বাণীতে প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। মহাত্মা ফকির লালন সাঁই তার গানে তিন পাগল, তিনটি বাসনা, ত্রিবেণীর ঘাট, তিন তারে হচ্ছে মিলন ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার করেছেন। তিনি একটি বাণীতে বছেছেন, “প্রেম রত্ন ধন পাবার আশে, ত্রিবেণীর ঘাট বাঁধলাম কষে”। অর্থাৎ, ইরা, পিঙ্গলা ও সুষমাকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। চর্যার ৪ সংখ্যক পদেও এ সম্পর্কে পদকর্তা অবতারণা করেছেন। সেখানে পদকর্তা বলছেন, “তিঅড্ডা জইনি অঙ্কবালী”। যোগিনী তুমি তিন ধারা চেপে এরপর আমায় আলিংগন দাও যেন নিষ্কাম প্রেমে অবতীর্ণ হতে পারি। চর্যার অধিকাংশ পদে দেহতত্ত্বের নিগূঢ় তত্ত্ব বিরাজমান।

আবার চর্যার ৪১ সংখ্যক পদে ভুসুকু পা বলছেন, “আই এ অনুঅনা এ জগরে ভাঙ্গতি এসো পড়িয়াই, রাজ সাপ দেখি জো চমকিই ষাড়ে কিং তং বডো খাই”। অর্থাৎ, বনের বাঘে না খেয়ে যখন মনের বাঘে খায় তখনই কেবল দড়ি দেখে সাপ বলে মতিভ্রম হয়। চর্যা পদকর্তাগণ যে অনেক বড় মাপের আধ্যাত্ম সাধনায় ব্রত ছিলেন তা তাদের গানের বাণী বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়। আধ্যাত্ম সাধনায় চর্যা ভাবসাধকগণ বর্তমান ভাবসাধকদের নিকট অনুসরণীয়। তাইতো, আধ্যাত্মিক সাধনায় চর্যা ভাবসাধকদের সাথে বর্তমান বাউল সাধকদের ভাবের এতো অন্তমিল লক্ষ করা যায়।  

রবিউল হক, লোক গবেষক ও শিল্পী

আই.কে.জে/




বাউলের চর্যাগান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন