ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে সরব। প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে তার উপস্থিতি থাকে সংবাদ সম্মেলন ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনেও প্রায় সময় তার উপস্থিতি থাকে। এ নিয়ে সাংবাদিক সমাজের অনেকের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
অতীতে দেশের কোনো সরকারপ্রধান, বা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে শফিকুল আলমের মতো প্রায় সব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ডেইলি নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর। শফিকুল আলম শুধু প্রধান উপদেষ্টার ‘প্রেস সচিব’, নাকি সরকারের ‘মুখপাত্র’, তা জানতে চেয়েছেন তিনি। আজ বুধবার (২১শে মে) তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ প্রশ্ন করেন।
নূরুল কবীবের পোস্ট ফেসবুকে এর মধ্যে ‘ভাইরাল’ (আলোচিত) হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা চলছে। অনেকে তার সঙ্গে ‘সহমত’, আবার অনেকে ‘দ্বিমত’ প্রকাশ করছেন। একটি বিশেষ মতাদর্শের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এ পোস্টের জন্য তাকে অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন। তাকে ‘ভারতের দালাল’ আখ্যায়িত করে ভারতে চলে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিচ্ছেন তারা।
ইংরেজিতে লেখা নূরুল কবীরের পোস্ট বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘‘এটা এখন সময়ের দাবি—বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টভাবে জনগণকে জানাক, শফিকুল আলম কি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ‘প্রেস সচিব’, নাকি সরকারে মুখপাত্র। যদি তিনি সত্যিই সরকারের মুখপাত্র হয়ে থাকেন—যেমনটা তার (শফিকুল আলম) আচরণ থেকে বোঝা যায়—তাহলে অধ্যাপক ইউনূস এবং তার উপদেষ্টা পরিষদের (ক্যাবিনেট) প্রত্যেক সদস্যকে শফিকুল আলমের বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও ধারার বিরুদ্ধে বারবার করা কটূক্তিমূলক মন্তব্যের দায় নিতে হবে।’’
নূরুল কবীরের পোস্টে লেখক এহ্সান মাহমুদ মন্তব্য করেন, ‘একজন গণতন্ত্রপরায়ণ ও সাহসী সাংবাদিক হিসেবে যে কেউ এ প্রশ্ন তুলতে পারেন। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের এ ভূখণ্ডে ন্যায্য কথা বলার মতো সাংবাদিক যেহেতু কম, তাই নূরুল কবীর ভাইকেই এ কথাটি বলতে হচ্ছে।’
তিনি লেখেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ কথা লেখার পরে যেটা হলো, সরকারি দল হিসেবে পরিচিত যারা, তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল নূরুল কবীরের উপর! এমনকি তারা বলছে, তুই ভারতীয় দালাল! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে মাঝেমাঝে দেখি, যে সমস্ত ইতর প্রকাশ্যে রাস্তায় দেখা হলে মিউ মিউ করে দূরে পালিয়ে যায়, তারা একেকটা এখানকার বড় বড় শিয়াল সেজে বসে আছে।’
তিনি বলেন, ‘৫ই আগস্টের পরে বিপ্লবী সেজে বসা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, সরকারের সুযোগ সুবিধা নেওয়া, সরকারি পদে যাওয়া লোকজনের প্রচ্ছন্ন মদদে নূরুল কবীর ভাইয়ের মতো গণতন্ত্রকামী সাংবাদিককে যে কোনো পরিসরে কটুক্তি কিংবা হেয় করার চেষ্টা করলে তার পরিণাম ভালো হবে না। জুলাই-আগস্টে আমাদের কলমের পাশাপাশি, হাতিয়ার নিয়ে রাজপথে ছিলাম- এ টুকু মনে রাখা দরকার।’
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগের আগে বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরোপ্রধান ছিলেন শফিকুল আলম। তিনি দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় সাংবাদিকতা করেন। তাকে প্রথমে সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিভিত্তিক প্রেস সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারির এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শফিকুল আলমকে জ্যেষ্ঠ সচিবের পদমর্যাদায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন