ছবি: সংগৃহীত
ভারতের দিক থেকে দেশটির ঢাকাস্থ হাই-কমিশনের কথিত ‘নিরাপত্তার’ প্রশ্ন সামনে আসছে গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে। ‘নিরাপত্তার’ ইস্যুটি শুধু ভারত সামনে আনলেও ঢাকায় অন্যান্য বিদেশি দূতাবাসগুলোর তরফ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে প্রকাশ্যে এ ধরনের কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি।
বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত কার্যক্রম পুরোপুরি চলছে। প্রশ্ন আসছে, অন্যান্য দেশগুলোর দূতাবাস নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও ভারতের এত ‘উদ্বেগ’ কেন?
ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার রেখেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভিয়েনা প্রটোকল অনুযায়ী বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাস ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাগতিক দেশ বাধ্য থাকে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা সুখবর ডটকমকে জানান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে, সেখানে বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটে গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাবার পর।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় সাড়ে সাত মাস পার করলেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘বরফ গলার’ ইঙ্গিত মিলছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলো বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও ভারত জানিয়ে দেয় যে, চিকিৎসার জন্য ভিসা ও কিছু জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা তারা ইস্যু করবে না। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে’ ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা’ করা হয়।
গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে সীমিত পরিসরে ভিসা আবেদন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। এরপর ১৬ই আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শুধু সীমিত পরিসরে জরুরি ও মেডিকেল ভিসা ইস্যু’ করবে ঢাকায় ভারতীয় হাই-কমিশন।
একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক কতটা জোরালো, সেটি প্রকাশ পায় ভিসা নীতির মাধ্যমে। সেজন্য স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, ভিসা দেওয়া ব্যাপকভাবে সীমিত করার মাধ্যমে ভারত কি বাংলাদেশের নতুন সরকারের ওপর ‘কূটনৈতিক চাপ’ তৈরি করতে চাচ্ছে?
তবে ভারতের দিক থেকে কখনো স্বীকার করা হয়নি যে, ‘কূটনীতিক চাপের’ অংশ হিসেবে ভিসা ইস্যু করা সীমিত করা হয়েছে। ভারত বরাবরই বলছে, এর সঙ্গে কথিত ‘নিরাপত্তার’ বিষয়টি জড়িত।
আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ‘বর্তমান সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে ভারত ভিসা ইস্যু ব্যবহার করছে। ভারতের দিক থেকে এটা একটা বার্তা যে, তারা সম্পর্ককে স্বাভাবিক মনে করছে না। এটা হচ্ছে একটা ডিপ্লোম্যাটিক সিগন্যাল।’
অন্যদিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কবে নাগাদ ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিসা জটিলতা আমরা সৃষ্টি করিনি। ভারত যে কোনো কারণে হোক, সেটা বন্ধ রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভিসা দেওয়া তাদের (ভারত) সার্বভৌম অধিকার। কোনো দেশ কাউকে যদি ভিসা না দেয় বা কোনো গোষ্ঠীকে ভিসা না দেয়, এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করছি, তারা (ভারত) তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন বা কার্যকলাপ বাড়াবেন, যেন লোকজন যারা ভারত যেতে চান, তারা ভিসা পান।’
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ভিসা প্রক্রিয়ার ধীরগতি শুধু বাংলাদেশের সরকারের নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ফলে ঢাকার সমর্থন দীর্ঘ সময়ের জন্য হারানোর আশঙ্কা আছে দিল্লির, বিশেষ করে শেখ হাসিনার দল দ্রুত ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকায়।
এইচ.এস/