ছবি - সংগৃহীত
পুঁজিবাজারে দীর্ঘ চার মাস ধরে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) পুনর্গঠন হয়।কিন্তু পর্ষদ আসার পর থেকে এ পর্যন্ত নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও আস্থাহীনতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। টানা পতনের ফলে বাজারে প্রতিদিনই বিক্রির চাপ বাড়ছে। একদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার ছাড়ছেন। অন্যদিকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ শেয়ার ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রির আওতায় পড়ছে।
শেয়ারের দাম যত কমছে, ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ঋণ সমন্বয়ে ফোর্সড সেলের চাপ তত বাড়ছে। বাজারে ক্রেতাসংকট থাকায় বিক্রির এ চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ফলে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এলেও অনেকে তা বিক্রি করতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থাহীনতার পাশাপাশি ক্ষোভও তীব্র হয়েছে। এ ক্ষোভ থেকেই বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন।
শেয়ার বাজারের এই পতনের জন্য বিশ্লেষকরা বেশ কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেছেন। কারণগুলো হলো-ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের হার, মার্জিন ঋণের বিপরীতে কেনা শেয়ার বিক্রি, একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। যার কারণে পোশাক ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে। যখন কোনও উৎপাদনমুখী খাতে উৎপাদন বন্ধ হয়, তখন তা শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা বিরাজ করলে স্বাভাবিক কারণেই শেয়ার বাজারে প্রভাব পড়ে।
দিন যত যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারে দরপতনের মাত্রা ততো বাড়ছে। একই সাথে লেনদেনের খরা যাচ্ছে। টানা পতন হচ্ছে মূল্যসূচকেরও। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিনদিন ভারি হচ্ছে। এ সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সবকটি মূল্যসূচকও কমেছে। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম তলানিতে। এখানেও সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। শুধু বর্তমান মাস নয়, গত কয়েক মাস ধরে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
গত ২০ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রাণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে বাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, সুশাসন নিশ্চিতে বিএসইসি ও সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়, বাজার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাজারের সমস্যা ও করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে বিএসইসি। পাশাপাশি ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শেয়ারবাজারের আকার ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজারের গভীরতা যেমন বাড়বে, তেমনি কোম্পানিগুলোর মূলধন ভিত্তিও শক্তিশালী হবে। আর এসব পদক্ষেপের সুফল পাবেন বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। অতীতের দুরবস্থা ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সরকার তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সুবিধা প্রদান করবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। কিন্তু সরকারের পদক্ষেপের এক মাসের অধিক সময় পার হলেও বাজারে কোনো কার্যকর প্রভাব পড়েনি। বরং দরপতন তলানিতে এসে ঠেকেছে।
টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। পতন ঠেকাতে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কোনো উদ্যোগই কার্যকর হচ্ছে না। এই অবস্থায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আর মাঝারি ও বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার বিমুখ হচ্ছে। যার কারণে প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে যাচ্ছে। তাতে বাজারে ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে। আর বিপরীতে বিক্রেতা বেশি হওয়ার কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
আই.কে.জে/