ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দূর্গাপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা শবনম এসেছেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তিনি দশম গ্রেডে বেতন চান।
তিনি বলেন, ‘বেতন তুলতে প্রতিমাসে যেতে হয় উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে। সেখানে অফিস সহকারী বেতন পান ১২তম গ্রেডে। আর আমি শিক্ষক হয়ে বেতন পাই ১৩তম গ্রেডে। যে কারণে অফিস সহকারীরাও আমাদের সম্মান দেন না। এখন আমি গ্রাজুয়েট শিক্ষক হয়ে কি একজন অফিস সহকারীকে গিয়ে স্যার সম্বোধন করবো?’
এই শিক্ষক বলেন, ‘অসম্মানের প্রতিবাদে দাবি জানাতে শহীদ মিনারে এসেছি। একজন রিকশাওয়ালার চেয়ে আমাদের আয় কম। বাজারে গিয়ে একটা ভালো মাছ কিনতে পারি না। দুই ঈদে যে বোনাস দেওয়া হয়, তা দিয়ে ঈদও হয় না। কোরবানি তো দেওয়াই যায় না।’
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পূর্ব পুনাইখারকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইয়াছিন মিয়া বললেন, ‘সরকারি গাড়িচালকরা পান ১২তম গ্রেডে বেতন। আর আমরা শিক্ষকরা পাই ১৩তম গ্রেডে। চালকদের চেয়েও এ দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা কম। অথচ দেশের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে পুরো কেবিনেট, সচিব সবাই প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা করেই আজ এতদূর গিয়েছেন। আমরাই তাদের পড়িয়েছি।’
শিক্ষক ফাতেমা শবনম ও ইয়াছিন আলীর মত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার সহকারী শিক্ষক আজ শনিবার (৮ই নভেম্বর) সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে তারা সকাল ৯টা থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এ আন্দোলন পরিচালনা করছে। সংগঠনগুলো হলো—প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকেরাও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি জানান, ‘হাজার হাজার শিক্ষক এখন শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের দাবি স্পষ্ট—দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বহুবার আলোচনায় গিয়েছি, কিন্তু কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন