মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সংসদে সংরক্ষিত আসন চায় দলিত সম্প্রদায় *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদির শোক *** সাগরিকার হ্যাটট্রিকে নেপালকে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ *** উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক *** হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার *** নিরীহদের হয়রানি না করতে অনুরোধ গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির *** পাইলট বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন: আইএসপিআর *** বিসিবির সিদ্ধান্ত বদল, স্টেডিয়ামে খাবার নিয়ে ঢুকতে মানা *** বিমান দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বাঁচলেন অভিনেত্রী সানা *** জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা মুলতবি

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ, বাড়াতে হবে প্রস্তুতি

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:৪২ অপরাহ্ন, ২১শে এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

বছরের শুরু থেকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার, ভুটান, নেপাল ও ভারতে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে। উৎপত্তিস্থল কিছুটা দূরে হওয়ায় এসব ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি দেখা যায়নি। কাছাকাছি বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তাতে ব্যাপক ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। 

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীতে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে জোর আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। ২০১৫ সালে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ন্যূনতম কোনো প্রস্তুতি এখনো নেওয়া হয়নি।  

বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর নানা পরিবর্তন-পরিবর্ধনে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও কেরানীগঞ্জের একাংশ। এসব এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান’ (ড্যাপ) প্রণয়ন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। 

সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নতুন এ পরিকল্পনায় নিশ্চিত হবে নগরের ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে  না। বরং, অপরিকল্পিতভাবে প্রতিনিয়তই রাজধানীর পরিধি বাড়ছে।

এ অঞ্চলের ভূমিকম্পের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১০০-১৫০ বছরে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এর আগে ১৭৬২ সালে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৮ দশমিক ৫ মাত্রার মারাত্মক ভূমিকম্প হয়। 

ওই ভূমিকম্পসৃষ্ট সুনামিতে বঙ্গোপসাগর-তীরবর্তী এলাকাগুলোয় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৮৬৯ সালে সিলেটের খুব কাছেই ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৮৫ সালে সিরাজগঞ্জের কাছে আরেকটি ভূমিকম্প হয়। ১৮৯৭ সালে সংঘটিত হয় ৮ মাত্রার ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের শিলং।

১৯০৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ভূমিকম্প হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ মাত্রার। সর্বশেষ ১৯৩০ সালে ‘ধুবড়ি আর্থকোয়েকে’ রংপুর অঞ্চলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিশ্লেষকরা আরো বলেছেন, প্রতি ১০০-১৫০ বছর পরপর ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পরপর হয় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। 

১৫০ বছরের চক্র অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। গত পাঁচ-ছয় বছরে ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে এ আশঙ্কা আরো বেড়েছে।

গত কয়েক দশকে ঢাকার সম্প্রসারণ  অপরিকল্পিতভাবে ও দ্রততার সঙ্গে হয়েছে। ঢাকার পুরনো অংশটি শক্তিশালী গঠনের মাটির ওপর গড়ে ওঠে। কিন্তু গত কয়েক দশকে বর্ধিত হওয়া অংশের মাটির গঠন অত্যন্ত  দুর্বল। এসব এলাকার বড় অংশই মূলত ভরাট হওয়া জলাভূমির ওপর গড়ে ওঠেছে।

রিখটার স্কেলে ৭ বা এর চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে এসব এলাকায় বড় ধরনের প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। ঢাকায় ভূমিকম্প হলে শুধু ভবন ভেঙে পড়বে তা-ই নয়, এখানে উদ্ধার কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 

অধিকাংশ এলাকার রাস্তা সরু, সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকবে না। অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ তারের কারণে কোথাও কোথাও আগুন লেগে যেতে পারে। তখন নগরী মৃত্যুকূপে  পরিণত হতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্পে বাংলাদেশে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকলেও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনেকে  বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না। অথচ এমন পরিস্থিতিতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তাই পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

এইচ.এস/

ভূমিকম্পের ঝুঁকি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন