শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা মাহফুজ আনামের *** প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহৃত তেলের জন্য হাঙর শিকার, বিলুপ্তি ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ *** শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা *** ‘তারেক রহমান যাকে ইচ্ছা তাকে প্রধান উপদেষ্টা বানাতে পারতেন’ *** শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে রোববার খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হবে *** চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে: মির্জা ফখরুল *** লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা *** খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পিছিয়ে যাচ্ছে *** ঢাকায় পৌঁছেছেন ডা. জুবাইদা *** কলকাতায় পাঁচ জেএমবি সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা মাহফুজ আনামের

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:০৩ অপরাহ্ন, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা থাকলেও নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করার কারণে তারা প্রশংসার দাবিদার বলে মনে করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তার মতে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সরকারের আমলে যা হয়নি, সেই উদ্যোগ নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার।

এ জন্য সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এবং আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য বলেও তার দাবি। অতীতের সর সরকারের সমালোচনা করলেও মাহফুজ আনাম উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন এক এগারোর জরুরি অবস্থার তত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কিত শাসন ব্যবস্থার সময়ে নেওয়া এক উদ্যোগের। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার যে উপাদানগুলো তৈরি করেছে, আগামীতে নির্বাচিত সরকার সেগুলোর বাস্তবায়ন করবে বলেও তিনি আশাবাদী। তার বক্তব্যের পরতে পরতে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের সমালোচনা, নিন্দা যথারীতি আছে।

মাহফুজ আনাম যখন এই প্রশংসা করছেন ও সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, তখনো দেশে ঘটছে জামিন না দেওয়া, ভিন্নমতাবলম্বীদের কারাগারে পাঠানো, রিমান্ড মঞ্জুর করা, শুরুতেই মামলার গ্রহণযোগ্যতা খতিয়ে না দেখা, ব্যক্তির সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও আইনি হয়রানি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত না করার ঘটনা। এসব করার মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখানোর সুযোগ নির্বাহী বিভাগকে করে দিয়েছেন বিচার বিভাগের সদস্যেরা।

অসংখ্য মানুষকে আসামি করা এবং বহু ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রমাণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করার ফলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেও বিগত সরকারগুলোর শাসনকালের মতো এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এটাকে সরকারের অঙ্গসংগঠন বলে মনে হয়। এই বিষয়ে মাহফুজ আনাম সামান্যই কথা বলেছেন। 'অ্যান ইনডিপেনডেন্ট জুডিশিয়ারি সিমস নিয়ার অ্যাট হ্যান্ড, বাট ক্যান স্টিল স্লিপ অ্যাওয়ে' শিরোনামে লেখা এক উপসম্পাদকীয়তে তিনি এসব কথা বলেন।

তার লেখাটি আজ শুক্রবার (৫ই ডিসেম্বর) ডেইলি স্টারের ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটিতে প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার প্রতি উল্লেখিত 'থ্যাংকস' শব্দটির ডেইলি স্টার বাংলায় অনুবাদ করেছে 'কৃতজ্ঞতা'। ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে লেখাটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে 'স্বাধীন বিচারব্যবস্থার স্বপ্ন: নাগালের মধ্যে থাকলেও ফসকে যেতে পারে' শিরোনামে।

মাহফুজ আনাম উপসম্পাদকীয়তে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কার্যক্রম নিয়ে আমরা যতোই সমালোচনা করি না কেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার কারণে তারা প্রশংসার দাবিদার। প্রধান বিচারপতির অধীনস্থ একটি পৃথক সচিবালয় না থাকলে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের, বিশেষত আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব থেকে কখনোই বেরিয়ে আসতে পারত না। আর এটাই দেশের আইনব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় স্থাপনের লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি অধ্যাদেশ হয়েছে। এ জন্য সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য। একইসঙ্গে বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়, যার নেপথ্যের নিরলস প্রচেষ্টাতেই এটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৫ সালের ৩০শে নভেম্বর বর্তমান সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি করে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে, যা স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

তিনি বলেন, একটি আলোচনা উপেক্ষা করা যাবে না। আর সেটা হলো—খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার, কিংবা জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকার স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

তিনি লেখেন, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন, জুডিসিয়াল সার্ভিস বিধি ও বেতন কমিশন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উদ্যোগটি নেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিম্ন আদালতকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করে।

তিনি বলেন, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচার বিভাগের সদস্যেরাও তাদের অধীনস্থ অবস্থা টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন। বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারের প্রতিবাদে কোনো বিচারকের পদত্যাগের উদাহরণ নেই। উল্টো বহু উদাহরণ রয়েছে, যেখানে দেখা যায় যে বিচার বিভাগ প্রতিরোধ না করে নির্বাহী হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

সরকারের সামান্য সমালোচনা করে তিনি বলেন, শত শত মানুষকে আসামি করা এবং বহু ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রমাণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করার ফলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এটাকে সরকারের অঙ্গসংগঠন বলে মনে হয়। বিচার বিভাগ যুক্তি দিতে পারে, এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ এবং তাদের এখতিয়ারের বাইরে।

তিনি লেখেন, কিন্তু যখন আইনের এই অপব্যবহার বিচার বিভাগকেই সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তখন কি তাদের প্রকাশ্যে নিন্দা জানানো উচিত না? সরকারের প্রতি এসব বন্ধ করার আহ্বান জানানো উচিত না? উচ্চ আদালত, বিশেষত প্রধান বিচারপতি এমন আহ্বান জানাতে পারেন এবং সেটাই করা উচিত। পেশার নৈতিকতা ও নীতিবোধ থেকেই তাদের এটা করা উচিৎ।

আগামী সরকারের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে মাহফুজ আনাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার যে উপাদানগুলো তৈরি করেছে, সেগুলো দ্রুত ও আন্তরিকতার সঙ্গে আইনে রূপান্তরিত করাই হবে আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রথম পরীক্ষা। আমরা আরও আশা করি, ভবিষ্যতে সংসদ সদস্যরা ভোটারদের প্রতি বেশি সম্মান দেখাবেন এবং শুধু দল, বিশেষ করে দলীয় প্রধানের প্রতি মাথা নোয়ানোর অভ্যস্ততা থেকে বেরিয়ে আসবেন।

সাংবাদিক মাহফুজ আনাম

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250