ছবি: সংগৃহীত
ফারুক মঈনউদ্দীন পেশায় ব্যাংকার। নেশায় কখনো গল্পকার, কখনো অর্থনীতি বিশ্লেষক, কখনো অনুবাদক, আবার কখনো ভ্রমণলেখক। মূলত কবিতা ও গল্পলেখার মধ্য দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে একে একে তার শাখা মেলতে থাকে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে, সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়। বহুমুখী সৃজনশীলতার স্বাক্ষর তিনি। চার দশক ধরে সাহিত্যের সঙ্গে তার বসবাস। সব শাখায় তিনি মুখরিত। আলোকিত। ভ্রমণকাহিনী বিষয়ক পাঠকনন্দিত লেখক তিনি। সাহিত্যশিল্পে ভ্রমণকাহিনী নতুনমাত্রার সংযোগ হলেও পাঠককে তার লেখা একগেঁয়েমি থেকে মুক্ত করে তৃপ্তি দেয়। টেনে নেয় নতুনের সন্ধানে।
তিনি সে মাত্রার সংযোগ সাধন শিল্পী। দেশে-বিদেশে ঘুরে ঘুরে সমাজ বাস্তবতা ইতিহাস ঐতিহ্য জীবনধর্মকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুদ্ধিদীপ্ত পাঠকের খোরাক হিসেবে উপস্থাপন করেন ফারুক মঈনউদ্দীন। তিনি ভ্রমণের স্থান-কালের ব্যাখ্যার চেয়ে বাস্তবতাকে পুঁজি করে সাহিত্যকাঠামোয় তুলে ধরেন। অমর একুশের বইমেলা ২০২৫ সামনে রেখে প্রখ্যাত এই লেখক কথা বলেছেন সুখবর ডটকমের সঙ্গে। বইমেলাকে তিনি যেভাবে দেখছেন, এর আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির প্রতি তার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সুখবরের বিশেষ প্রতিবেদক।
ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘এবারের বইমেলার জন্য আলাদা কোনো চাওয়া নেই। বাংলা একাডেমির কাছে বহুদিন ধরেই যে চাওয়াটা পেশ করে আসছিলাম, সেটাই নতুন করে চাইতে পারি। তবে আসলে কোথাও তো তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, কেবল কুশীলব ছাড়া। আরেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো, অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, বইমেলা আদৌ হবে কি না সেটা নিয়েও তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি। এর মধ্যে অন্য এক গোষ্ঠীর সম্মেলনের জন্য মেলার স্টল সাজানোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে পত্রিকায় দেখেছি। পরিবর্তন বলতে এগুলোই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির কাছে আমার চাওয়া খুবই সামান্য। মেলাটিকে সেলফিবাজ ও বই হাতে নিয়ে ছবি তোলানো অপাঠকদের কবল থেকে মুক্ত করা। মেলায় আসা কত শতাংশ মানুষ বই কেনেন, এর একটা জরিপ বাংলা একাডেমিই করতে পারে, কিন্তু করেনি। মেলায় ঢোকার জন্য যদি একটা প্রবেশমূল্য ধরা যায়, তাতে হয়তো উটকো লোকের যন্ত্রণা কমবে না। কারণ, আজকাল দশ বা বিশ টাকার টিকিট কোনো ব্যাপারই না।’
তিনি জানান, ‘‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তবে টিকিটের ব্যবস্থা করলে বাংলা একাডেমির কিছু আয় হয়, যা দিয়ে মেলার খরচ কিছুটা উঠে আসে। এখানে ‘প্রাণের মেলা’ ইত্যাদি বলে আবেগ টেনে আনা উচিত হবে না। বিষয়টাকে দেখতে হবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকরাও কি আবেগে স্টল দেন, নাকি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যও থাকে?’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি, মেলায় ঢোকার জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করলে এক শ্রেণির মানুষ ‘প্রাণের মেলা’ ইত্যাদি বলে অকারণে বাধা দেবেন। আন্তর্জাতিক শিল্প মেলায় ঢোকার জন্য ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়, স্টলগুলো খোলা থাকে রাত নয়টা পর্যন্ত, তাহলে বই মেলায় একই নিয়ম করা যাবে না কেন?’’
বিশিষ্ট এই লেখক সুখবরের পাঠকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘এবারে আমার কমপক্ষে চারটা বইয়ের প্রস্তুতি থাকলেও প্রতিবছরের মতো কোনো প্রকাশক যোগাযোগ করেননি, যা আগে সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকেই হতো। বুঝতে পারি, তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। তাই কোনো বই বের হওয়ার কথা ছিল না। তবু ছোট একটা বই বের হবে, যেটাকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘চলমান ভোজের শহর’ বইটির দ্বিতীয় খণ্ড বলা যেতে পারে। হেমিংওয়ের ‘অ্যা মুভেবল ফিস্ট’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। কিন্তু ২০০৯ সালে আরো প্রায় নয়টি নতুন অধ্যায় সংযোজিত করে বইটির নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সম্পাদনার নামে এই অধ্যায়গুলো বাদ দিয়েছিলেন হেমিংওয়ের চতুর্থ স্ত্রী মেরি ওয়েলশ। কেবল সেই নতুন অধ্যায়গুলোর অনুবাদ নিয়ে আরেকটা বই প্রকাশ করবে চৈতন্য প্রকাশ। আগেরটিও এখান থেকেই বের হয়েছিল। বইটির নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ‘চলমান ভোজের বর্জিত অধ্যায়গুলো’ হতে পারে।’’
শান্তনু/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন