ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার ৪৭তম ও নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে, এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে দেশে দেশে। এশিয়া ও বাংলাদেশও এই প্রক্রিয়ার বাইরে নয়। কেমন হবে ট্রাম্পের আমলের প্রশাসন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে এর কেমন প্রভাব পড়বে, এমন বিশ্লেষণে গভীর মনোনিবেশ করছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
২০শে জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর ঢাকা ও ওয়াশিংটনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে কী না, এই প্রশ্নও সামনে আসছে। অনেকে নানা হিসাব-নিকাশ করলেও কেউ কেউ মন্তব্য না করে এর ভার সময়ের উপর ছেড়ে দিতে আগ্রহী।
কারো কারো মতে, ট্রাম্পের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে মোটা দাগে একটা পরিবর্তন আসতে পারে। সেটা হলো, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে যে গুরুত্ব দেওয়া হতো, ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় তেমন গুরুত্ব না-ও পেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে আমেরিকার এশিয়া নীতির আলোকে, নাকি নয়াদিল্লির চোখে দেখবে, এই প্রশ্নও কেউ কেউ সামনে আনছেন।
সুখবর ডটকমের পক্ষ থেকে একাধিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করলে তারা ধারণা দেন, ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে নাটকীয় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে বড় কিছু ঘটবে না। এ রকম কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। নতুন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার কূটনৈতিক অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গিতে তাই তেমন পার্থক্য দেখা যাবে না।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হবে না বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও মনে করছেন। গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরের মাস সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো ঢাকায় সফরে আসে আমেরিকার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে আমেরিকার ওই প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির যে পটপরিবর্তন হয় এবং এরপর থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের সমর্থন থাকবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আমেরিকা চায়, বাংলাদেশসহ এশিয়ার রাজনীতিতে যেন অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়। কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে দক্ষিণ এশিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা থাকবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধমে বাংলাদেশে যাতে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
যোগাযোগ করলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ায়, বা আমেরিকার ক্ষমতার পালাবদলে আপাতত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখছি না। আমেরিকার সদ্য সাবেক বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে গত ৫ই আগস্টের পর গঠিত সরকারকে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সহযোগিতার যেসব আশ্বাস দিয়েছে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আমার ধারণা।’
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শপথ নেওয়ার পরও ড. ইউনূস তাকে শুভকামনা জানান। সেই বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের জন্য দুই দেশ কাজ করবে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশের সম্পর্ক দলের ভিত্তিতে হয় না। যেসব বিষয় নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ চলছিল, তাদের যে চাওয়া ছিল, দেনদরবার হচ্ছিল, সেগুলো পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ছিল। কাজেই, এটা বলা ঠিক হবে না, ট্রাম্প প্রশাসন ও বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুধু ডেমোক্র্যাট (আমেরিকার রাজনৈতিক দল) না, রিপাবলিকান পার্টির (আমেরিকায় ক্ষমতাসীন দল) নেতাদের সঙ্গেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুসম্পর্ক রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সর্ম্পক আরও উচ্চ শিখরে পৌঁছাবে।’
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন