ছবি: সংগৃহীত
শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে আগামীকাল রোববার (২৮শে সেপ্টেম্বর)। দেশের বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে পূজামণ্ডপগুলো সেজেছে রঙ, আলো আর প্রতিমার আভায়। কটিয়াদীর আড়িয়াল খাঁ নদপাড়ে পূজার প্রস্তুতিকালে থাকে আলাদা কোলাহল। এখানে প্রতি বছর বসে বিখ্যাত ঢাকের হাট, যেখানে বাদ্যযন্ত্র নয়, ভাড়া হয় বাদক দল।
কটিয়াদীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট শুধু বাদক বা ঢাকিদের ভাড়া নেওয়ার জায়গা নয়, বরং এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। খবর বাসসের।
সরেজমিন হাটে গেলে দেখা যায়, একপাশে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, সানাই, বাঁশি, খঞ্জরি, করতাল—বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিজেদের নৈপুণ্য দেখাচ্ছে দলগুলো। অন্যপাশে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছেন পূজারি ও আয়োজকেরা। কার তাল কত নিখুঁত, কার বাজনায় দেবীর আগমন আরো মহিমান্বিত হবে—এই পরীক্ষার ওপরই নির্ভর করছে চুক্তির অঙ্ক। দাম উঠছে ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।
এই হাটে বাদকেরা যারা আসেন, বাজিয়েই তারা সংসার চালান। মুন্সিগঞ্জ থেকে সাত জনের দল নিয়ে এসেছেন হরি রাজ। তার কণ্ঠে আনন্দ আর অভিমান। তিনি বলেন, '৩০ বছর ধরে আসছি। পরিবার ছেড়ে আসতে হয়, কষ্ট হয়। তবুও ঢাকই আমাদের রুটি-রুজি।'
এখানে কারও স্বপ্ন পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, কারও লক্ষ্য নতুন জামাকাপড় বা সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগানো। কুমিলা থেকে ৮ জনের দল নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ আলি। তিনি জানালেন, তাদের লক্ষ্য ৯০ হাজার টাকার চুক্তি।
সজিব দাসের দল এসেছে মুন্সিগঞ্জ থেকে, তাদের দাবি এবার এক লাখ বিশ হাজার টাকা। তিনি মনে করেন, আগের মতো জৌলুশ নেই হাটে।
এ হাটের জন্মের ইতিহাস জানান স্থানীয়রা। তারা জানান, ষোড়শ শতকে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় দুর্গাপূজার জন্য ঢাকিদের খুঁজতে বিক্রমপুরে (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) বার্তা পাঠাতেন। নৌকায় নৌকায় ঢাকি এসে ভিড়তেন ব্রহ্মপুত্রের যাত্রাঘাটে।
রাজা নিজে দাঁড়িয়ে শুনতেন, সেরা দলকে দিতেন পুরস্কার। সেই আয়োজনই ধীরে ধীরে রূপ নেয় হাটে, যা পরে স্থান বদলিয়ে আসে কটিয়াদীর পুরাতন বাজার এলাকায়। আজও সেই ঐতিহ্য বেঁচে আছে। শুধু পূজার আয়োজন নয়, এটি হয়ে উঠেছে মিলনমেলা। ঢাকের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা—তাক দুম, তাক দুম বাজে, যেন নদীপাড়ের বাতাসও দুলে ওঠে সুরে।
এ হাটে পূজারিদের ভিড় লক্ষ্য করার মতো। একজন জানালেন, প্রতি বছর পূজার সময় ঢাকি ছাড়া মণ্ডপ কেমন যেন ফাঁকা লাগে। তাই এবার নরসিংদী থেকে কটিয়াদীর ঢাকের হাটে এলাম ঢাকি ভাড়া করতে। এখানকার ঢাকিদের বাজনা আলাদা আবেগ জাগায়। দাম একটু বেশি হলেও ভালো দলের জন্য আমরা রাজি আছি, কারণ দেবীর আরাধনা ঢাকের তালে তবেই পূর্ণ হয়।
খবরটি শেয়ার করুন