প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি, ভ্যাটের বাড়তি চাপ, তারল্য সংকট, টাকার প্রবাহ কমানো, ডলারের উচ্চমূল্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ঘাটতিসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকটে পড়েছে। যখন ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায় তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের সব হিসাব ওলট-পালট হয়ে যায়। বর্তমানে ব্যাংকের ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ঋণের খরচ বেড়েছে, মুনাফার হার কমে এসেছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। যার কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আর এসব কারণে নতুন করে শিল্প স্থাপন বা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না তারা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা এখন কঠিন সময় পার করছেন।
সংকটময় পরিস্থিতিতে চালু শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে আবার নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া খেলাপির নতুন নিয়ম শিল্প খাতে আরো সংকট তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না। এ জন্য নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। আর সরকার যেসব নীতি নিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে তারা বিপাকে পড়বেন। ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের ধস নেমেছে। বর্তমান সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আগামী দিনে রাজনীতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তায় আছেন। আবার নির্বাচন হলে কারা ক্ষমতায় আসতে পারে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা বুঝেশুনে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন।
আরো পড়ুন : বই সংকটে ব্যাহত লেখাপড়া, দ্রুত মিলবে কি সমাধান?
বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর-মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংক চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দেশের অর্থনীতি এই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য সংকটের মুখোমুখি হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যে মন্দা, আমদানি ব্যয় এবং ঋণের সুদ বৃদ্ধির চাপসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণ এই সংকটের জন্য দায়ী। বিশ্বব্যাংক আরো বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাকশিল্প। কিন্তু ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয় হ্রাস পাচ্ছে। দেশের মূল্যস্ফীতি ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে এবং টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। দেশে বিদ্যমান অস্থিরতার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। নতুন করে ঋণ নিতে কেউ আগ্রহী হচ্ছে না। কারণ উদ্যোক্তারা চলমান বহুমুখী সংকটের কারণে নতুন ঋণ নিতে চাচ্ছেন না। ফলে দেশে বিনিয়োগও হচ্ছে না। সামষ্টিক অর্থনীতি এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। উচ্চমূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতের দুর্দশা, গ্যাসের অভাব, জ্বালানি সরবরাহের অনিশ্চয়তা ও ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে দ্রুতই আস্থার সংকট দূর করতে হবে।
এস/ আই.কে.জে/