ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে দুই কোম্পানির কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার (২২শে সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। বাদী হিসেবে নাম রয়েছে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক রুবেল হোসেনের। বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।
দুদক বলছে, মামলাগুলোতে এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ওয়েল মার্ট লিমিটেড (টেক্সটাইল) থেকে যথাক্রমে ৫৫ কোটি ও ৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে জাবেদ ও অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে। এক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সরোয়ার আলমের কাছ থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ নেন জাবেদ। ওই অর্থ বিদেশে পাচারও করা হয়েছে। সরোয়ার আলম ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ টাকা দেন। পরে এইচ এম স্টিলের চেকের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ জাবেদের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর, ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ নানা খাতে ব্যবহার করে বিদেশে পাচার করা হয়।
এ মামলায় জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামান ছাড়াও ইউসিবিএলের সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট গ্রুপের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল আজিজ, মোহাম্মদ মিজবাহুল আলম, মোহাম্মদ ইয়াছিনুর রহমান ও মো. ইউসুফ চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
অপর মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওয়েল মার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সিরাজুল ইসলামকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নামে নেওয়া ২০ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে ৫ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। এই টাকা জাবেদের কর্মচারী আবদুল আজিজের মাধ্যমে ইউসিবিএল সদরঘাট শাখায় খোলা ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং হিসেবে স্থানান্তর, পরে উত্তোলন ও দায় পরিশোধের কাজে ব্যবহার করা হয়। এ মামলায়ও জাবেদ ও তার স্ত্রীসহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৪শে জুলাই ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগে জাবেদ, তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তখন অভিযোগ করা হয়, আরামিট গ্রুপের এক কর্মচারীর নামে নামসর্বস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণ নেওয়া হয়। সেই অর্থ পরবর্তীতে কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করা হয়।
সেই মামলার তদন্তে নেমে ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে আরামিট গ্রুপের দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আবদুল আজিজ ও উৎপল পালকে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে আদালতের অনুমতিতে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের মতে, উৎপল পাল ছিলেন জাবেদের বিদেশে সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্বে আর আবদুল আজিজ ছিলেন সম্পদ কেনাবেচা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে।
এদিকে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার (২১শে সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমানের আদালত সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আদেশ দিয়েছেন। একই দিন ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় রুকমিলার গাড়িচালকের বাড়ির পাশ থেকে ২৩ বস্তা নথিপত্র জব্দ করে দুদক। দুদক বলছে, নথিপত্রগুলোতে দেশে-বিদেশে জাবেদের সম্পদের দলিল ও হিসাবনিকাশ রয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান জানান, প্রাথমিক যাচাইয়ে তারা জাবেদের মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদের তথ্য পেয়েছেন।
উল্লখ্য, চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী, পরে ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর আদালত ব্রিটেনে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং আমেরিকা ৯টি সম্পত্তিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়। একই বছরের ৫ই মার্চ আদালত জাবেদ-রুকমিলার নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাবও জব্দ করে, যেখানে জমা ছিল ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি। ২০২৪ সালের ৭ই অক্টোবর আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে তারা দুজনেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন