ছবি: সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জ শহরের কওমি জুটমিলের এক কোণের বারান্দায় থাকেন সালেয়া বেগম। বয়স পেরিয়েছে ৬০। অনেকে তাকে ‘সালে পাগল’ নামেই চিনতেন। প্রতিদিন সকাল বেলা ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে বের হতেন, বিকেলে ফিরে আসতেন নীরবে। কেউ জানত না, তার নিঃশব্দ জীবনে ধীরে ধীরে জমিয়ে গেছেন টাকা-কড়ি।
শনিবার (১১ই অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মাছুমপুর নতুনপাড়া এলাকায় তার কাছ থেকে স্থানীয়রা আরও এক বস্তা টাকা উদ্ধার করেছেন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গুনে দেখা যায়, বস্তাটিতে রয়েছে ৪৭ হাজার ৮২৬ টাকা।
এর আগে ৯ই অক্টোবর সকালেও একই স্থানে সালেয়া বেগমের দুই বস্তায় মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৫৩ টাকা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে তিনটি বস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যবহারযোগ্য টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯ টাকা।
সালেয়া বেগমের একমাত্র মেয়ে শাপলা খাতুন বলেন, ‘মা একা থাকতে চাইতেন। আমরা জানতামই না, তিনি এত টাকা জমিয়েছেন। এখন মা অসুস্থ। এই টাকা দিয়ে তার চিকিৎসা করানো হবে।’
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. শাহরিয়ার শিপু বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আরও একটি বস্তা উদ্ধার করে ৪৭ হাজার ৮২৬ টাকার মতো পাওয়া গেছে। টাকাগুলো সালেয়া বেগমের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। যদি আল্লাহ তাকে নিয়ে যান, তবে অবশিষ্ট টাকা তার মেয়েকে দেওয়া হবে। একজন ভিক্ষুকের কাছেও এত টাকা থাকতে পারে, এটা সত্যিই বিস্ময়কর।’
সালেয়ার স্বামী মারা গেছেন অনেক বছর আগে। এরপর একাই জীবন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চার দশক ধরে ভিক্ষা করে নিজের মতো করে বেঁচে ছিলেন।
মানুষের অগোচরে সালেয়া বেগম কত টাকা জমিয়েছেন, তা হয়তো তার কাছেও ছিল অজানা। কওমি জুটমিলে এক কোণের বারান্দার সেই ছোট জায়গাটিই ছিল তার আশ্রয়, আর সেই জায়গাতেই লুকানো ছিল জীবনের সব সঞ্চয়—তিন বস্তা টাকা।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন