শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ক্ষতির কারণ বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৫০ অপরাহ্ন, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

জন্মের সূচনালগ্ন থেকে অর্থাৎ ১৯৭৮ সাল থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ কয়বছরে বহুবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে দলটি এবং বর্তমানে বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, এতো প্রভাবশালী দল মানুষের কাছে তার গঠনমূলক ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হওয়ার বদলে নিজেদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দ্বারা ঘৃণ্য হয়ে উঠেছে।

বিএনপি ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে দেশে সহিংসতা, চরমপন্থা ও অস্থিতিশীলতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিএনপির শাসনামলে পুরো দেশ এ দলের অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে। তাদের দুর্নীতি, মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এতোটাই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর উপর তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে।

এই সময়কার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিরাজমান দুর্নীতি। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিতে জড়ানো তখনকার সময়ে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এবং একইসাথে দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদেরা সরকারি তহবিল আত্মসাৎ এবং ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ণ করে এবং দেশকে দারিদ্র‍্যের দিকে ঠেলে দেয়।

বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, রাজনৈতিক ভিন্নমতাদর্শী কর্মীদেরকে নির্যাতনের খবর তখন প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে উঠে। বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। সারাদেশেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷ বিএনপি এদেশের নাগরিকদের অধিকারই শুধুমাত্র লঙ্ঘন করেনি, বরং এদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছে।

বিএনপির কার্যকলাপ বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তারা যে বিভাজনমূলক রাজনীতিতে লিপ্ত ছিল, তা দেশের সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। এর একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হল, কট্টরপন্থী ইসলামী দল, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে বিএনপির সম্পৃক্ততা। 

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা চালানোর ইতিহাস রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। মন্দির ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘুদের হত্যা-নিপীড়ন-ধর্ষণসহ নানা ঘৃণ্য কাজের সাথে লিপ্ত হয়ে আছে দলটি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত হিন্দুবিরোধী সহিংসতার মূলে ছিল এ দল। হিন্দু ও বৌদ্ধসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে নিপীড়ন চালানো হয়, তা দেশে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা বিশ্ব।

জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন হলো ইসলামী ছাত্র শিবির। এদের মূল লক্ষ্য সমাজে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। এ গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক ইসলামী সংগঠনগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে সারাবিশ্ব জুড়ে নাশকতামূলক দমন-পীড়নে সহযোগিতা করছে।

জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং হরকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি (হুজি) এর মতো চরমপন্থী দলগুলোর সাথেও বারবার জড়িয়েছে বিএনপির নাম৷ এ দলগুলো বাংলাদেশে বারংবার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এদের কর্মকাণ্ডের দুইটি উদাহরণ হলো গাজীপুরের একটি স্থানীয় আদালতে বোমা হামলা এবং খুলনার একটি মসজিদে হামলা। বাংলাদেশের অপর একটি উগ্র ইসলামী দল, হেফাজত-ই-ইসলামকেও চালিয়েছে বিএনপি। তাছাড়া পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী যেমন, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের সাথেও বিএনপির ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা ছিল৷ পাকিস্তানের কুখ্যাত দল আইএসআই বাংলাদেশে অশান্তি ও সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য জেআইকে কাজে লাগায়।

বিএনপির বিরূপ কর্মকাণ্ড ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বাংলাদেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর সহিংস রাজনীতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। বিক্ষোভ, ধর্মঘট ও অবরোধের আশ্রয় নিয়ে এ দল সারাদেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় তহবিলের অব্যবস্থাপনার দরুন বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ব্যাঘাত ঘটে। তাদের কার্যক্রমে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের শাসনামলে সারাদেশে দুর্নীতি, দারিদ্র্য, বেকারত্ব চরম পর্যায়ে এসে পৌঁছে। 

বিএনপির রাজনৈতিক দমননীতি, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের প্রতি সক্রিয় সমর্থনের ফলে দেশের মানবাধিকার ব্যবস্থা  ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়৷ একইসাথে রাজনৈতিক ভিন্নমতাদর্শীদের উপর দমন-পীড়ন চালানোর ফলে সমাজের বহুত্ববাদী কাঠামোও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তাদের এরূপ কার্যক্রমের ফলে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচনার শিকার হয়। 

অন্যদিকে দেখা যায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নীতির সাথে বিএনপির নীতির রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। শেখ হাসিনা সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নয়নের শিখরে এসে পৌঁছেছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়েছিল, যার ফলে এদেশকে অনেকে হেয় নজরে দেখেছে এতোদিন। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন দিন দিন উন্নত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার পর মাত্র ১৪ বছরের স্বল্প ব্যবধানে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুণ্ঠন এবং অরাজকতার রাজনীতি চালিয়ে ২০০৬ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা থেকে সরে যায়, তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) ছিল মাত্র ৫৭০ ডলার। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই এখন ২৫৭০ ডলার। 

৬.৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৩ তম বৃহত্তম অর্থনীতি। অন্যদিকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ১০ টি অর্থনৈতিক রাষ্ট্রের মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

বছরের পর বছর ধরে বিএনপির সদস্যরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিএনপির অসংখ্য রাজনীতিবিদ ফৌজদারি মামলার সাথে জড়িত। এমনকি বিএনপির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড তারেক রহমান নিজেই গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত।

বিএনপি যে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর জন্য হুমকি তা এদেশের মানুষ বারবার বুঝতে পেরেছে। অন্যদিকে ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকার দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যদিও বিএনপির বিভাজনের রাজনীতি ও নেতিবাচক প্রভাব এখনও অব্যাহত রয়েছে, তবে দেশের মানুষ দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে এখনও সমর্থন জানাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারকেই।

এসকে/ এএম/  


বিএনপি জামায়াত শিবির জেএমবি হুজি

খবরটি শেয়ার করুন