সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইবি চারুকলা শিক্ষার্থীরা তৈরি করলেন মেসোপটোমিয়া সভ্যতার নিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৩:০৯ অপরাহ্ন, ২০শে নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি : সুখবর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিভিন্ন ব্যবহৃত জিনিসপত্র রিসাইকেল করে ও মাটি দিয়ে তৈরি করেছে পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপোটেমিয়া। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের ২১০নং কক্ষে এই সভ্যতার প্রদর্শনী চলে। যা মুগ্ধ করেছে বিভাগটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। 

জানা যায়, সোমবার বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের 'তোমার জানা মেসোপটেমিয়া' শিরোনামে প্রেজেন্টেশন ছিল। এসময় ৪টি গ্রুপে শিক্ষার্থীরা নিজেদের হাতে তৈরি জিনিসগুলোর বর্ণনা দেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে প্রাচীন ওই যুগের রাজা রাণী ও প্রজাদের কর্মকাণ্ড অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের দেখান। যার মাধ্যমে এই সভ্যতা সম্পর্কে নতুন করে জানছে ও শিখছে অনেকেই। নিজেদের হাতে এমন কাজ করতে পেরে খুশি বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। 

এসময় তারা বলেন, আমরা সবসময়ই বই পড়ে শেখার চেষ্টা করি। তবে এবার এই সভ্যতা নিজ হাতে তৈরি করতে গিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি। সবকিছু খুবই দারুণ লেগেছে। কাজটি উপভোগ করেছি।  

বইয়ের ভাষায় মুখস্থ করার চেয়ে হাতে-কলমে দেখতে পেয়ে খুশী দর্শনার্থীরা। তারা বলেন, আমরা বইয়ের পাতা উল্টিয়ে এমন সভত্যা সম্পর্কে জেনেছি। তবে আজ সবকিছু সামনে থেকে দেখে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি 'মেসোপোটেমিয়া' সভ্যতাকে সামনে থেকে দেখছি। 

আরো পড়ুন : ইবিতে ‘কুয়াশা ও কবিতায় পিঠা-পার্বণ’ উৎসব

এদিকে বিভাগটির প্রভাষক ও কোর্স শিক্ষক অনিন্দিতা হাবিব শিক্ষার্থীদের এমন সৃষ্টিশীল কাজে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এত কম সময়ে এত সুন্দর কাজ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সবার কাজই অনেক সুন্দর হয়েছে। ওদের এমন সৃষ্টিশীল কাজ আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করছে। আরও এগিয়ে যাক সবাই। সকলের জন্যই শুভ কামনা। 

শিক্ষার্থীদের এমন নান্দনিক কাজ দেখে মুগ্ধ বিভাগটির ছাপচিত্র ডিসিপ্লিনের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে এত নান্দনিকভাবে নিজেদের উপস্থাপন উপভোগ করেছি। এমন আয়োজন বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতেও রাখা যায়।

এসময় বিভাগটির সভাপতি ড. এ এইচ এম আক্তারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের বিভাগটি খুবই নবীন। তবে স্বল্প সময়ে ডায়নামিক শিক্ষকদের সহযোগিতায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে এটি। আমি নিজে ইংরেজি বিভাগের হলেও মনেপ্রাণে সবসময়ই চারুকলাকে লালন করি। আরও এগিয়ে যাক বিভাগটি। প্রতিটি নান্দনিক কাজ আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। যতদিন থাকবো বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবো। 

শিক্ষার্থীদের এমন সৃষ্টিশীল কাজ মন ছুঁয়েছে সকল দর্শনার্থীর। এমন সৃষ্টিশীল কাজ ছড়িয়ে যাক সর্বক্ষেত্রে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। 

উল্লেখ্য, খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়ায় অতি উন্নত এক সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল মিশরীয় সভ্যতা থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল এবং বহিঃশত্রুদের থেকে খুব একটা সুরক্ষিত ছিল না বলে বারবার এর উপর আক্রমণ চলতে থাকে এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই ব্রোঞ্জ যুগে আক্কাদীয়, ব্যবিলনীয়, আসিরীয় ও লৌহ যুগে নব্য-আসিরীয় এবং নব্য-ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে উঠে।

খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ সালের দিকে মেসোপটেমিয়া পার্সিয়ানদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল কিন্তু পরে এই ভূখণ্ডের আধিপত্য নিয়ে রোমানদের সাথে যুদ্ধ হয় এবং রোমানরা এই অঞ্চল ২৫০ বছরের বেশি শাসন করতে পারে নি। দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিকে পার্সিয়ানরা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চল তাদের শাসনেই থাকে। এরপর মুসলিম শাসনামল শুরু হয়। মুসলিম খিলাফত শাসনে এই অঞ্চল পরবর্তীতে ইরাক নামে পরিচিতি লাভ করে।

আবির/ এস/ আই. কে. জে/ 


শিক্ষার্থী বিনা খরচে দর্শনার্থী

খবরটি শেয়ার করুন