সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওয়াসার এটিএমের পানির দাম বাড়লো ৭৩ শতাংশ, গ্রাহকদের ক্ষোভ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৪৩ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

কম সময়ের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢাকা ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্প। ঢাকার যেসব এলাকায় পানির মান খারাপ সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ এ পানির চাহিদা ব্যাপক। স্বল্প খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্পের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট এক্সিল্যান্স (এসিই) পুরস্কার পেয়েছিল ড্রিংকওয়েল। এ পুরস্কারের আট মাসের মাথায় কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ওয়াটার এটিএমের পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকের অভিযোগ, ঢাকা ওয়াসা বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ করে তা বিশুদ্ধ নয়। গ্যাস পুড়িয়ে পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। এমন অবস্থায় ওয়াটার এটিএম বুথের বিশুদ্ধ পানি জনপ্রিয় হয়। কিন্তু এক লাফে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে’ ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে প্রতি লিটার পানির মূল্য ৭০ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ১০ পয়সা ভ্যাট। কিন্তু বৈশ্বিক অবস্থা বলতে ওয়াসা ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (৩১ জুলাই) পর্যন্ত এই পানি ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।

ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, শুরুতে শহরের নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজনকে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার লক্ষ্যে এটিএম বসানো হয়েছিল। এটিএমের পানির মানের কারণে এখন সব শ্রেণির লোকজনই গ্রাহক হচ্ছেন। এই পানির গুণগত মান বোতলজাত পানির মতোই।

কিন্তু ঠিক কী কারণে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন রামেশ্বর দাস। তিনি বলেন, ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসীম এ খান। এই পানির দাম বাড়ানোর সঙ্গে আমার প্রকল্পের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন ও পরিচালনায় ব্যয় বাড়ছে। তাই পানির দাম বাড়াতে হচ্ছে। তবে এক লাফে প্রতি লিটার পানিতে ৩৪ পয়সা বাড়ানোর কোনো দরকার ছিল না।

২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর রাজধানীবাসীকে কম খরচে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট এক্সিল্যান্স (এসিই) পুরস্কার পেয়েছে ড্রিংকওয়েল।

মহাখালীর আইপিএইচে ঢাকা ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে নিয়মিত পানি নেন গৃহিণী আফরোজা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই বুথ থেকে পানি নিয়ে ফেরার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। এসময় তিনি পানির দাম প্রতি লিটারে ৩৪ পয়সা বাড়ার খবর জানেন না বলে জানান।

আফরোজা বলেন, ওয়াসা বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ করে তা সরাসরি পান করা যায় না। ফুটিয়ে পান করতে গেলেও অনেক সময় পানির ওপর ফেনা ওঠে। এ পানি ফোটাতেও গ্যাসের বিল দিতে হয়। এছাড়া পানি বিশুদ্ধ করতে সময় ব্যয় হয় এবং ঝুঁকিও থাকে। তাই দুই বছর ধরে ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে বিশুদ্ধ পানি পান করছি। বোতলজাত পানির মতোই স্বাদ। তবে এখন যদি পানির দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকে তা নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে।

একই বুথ থেকে পাঁচ লিটার করে আলাদা দুটি বোতলে পানি নিচ্ছিলেন মিনহাজ উদ্দিন। পানির দাম বাড়ায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিনহাজ বলেন, ওয়াসা একটি সেবামূলক সংস্থা। প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। এখন এক লাফে এত পরিমাণ দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।

ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৯৫টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ড্রিংকওয়েল। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো একটি আরএফআইডি কার্ড মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে বিশুদ্ধ খাবার পানি। কার্ডে ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবেন গ্রাহক। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়। এই সেবা পেতে পানির এটিএম বুথের গ্রাহকসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন এটিএম বুথের কার্ডের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুনআজ থেকে বন্ধ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি

গ্রাহক হওয়া যাবে যেভাবে

যে কোনো একটি ওয়াটার এটিএম বুথে গিয়ে দায়িত্বরত অপারেটরকে বললেই কার্ড পাওয়া যায়। এজন্য সঙ্গে নিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ৫০ টাকা (ফি)। এটিএম কার্ডে একবারে সর্বোচ্চ ৯৯৯ টাকা আর সর্বনিম্ন ১০ টাকা রিচার্জ করে পানি নেওয়া যায়। কার্ড রিচার্জও করেন বুথ অপারেটর। তবে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও রিচার্জের পদ্ধতি চালু হয়েছে।

এসি/ আইকেজে/


এটিএম পানি

খবরটি শেয়ার করুন