ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পর্যটনের কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেই জায়গাগুলোর কথা মনে আসে, তার মধ্যে অন্যতম কক্সবাজার। এখানকার নয়নাভিরাম সৈকতের সৌন্দর্য ঋতু পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে রূপবদল করে, এমনকি দিনের শুরু আর সূর্যাস্তের সৈকতের মধ্যেও হরেক রকম তফাৎ। এজন্যই দেশ তো বটেই, বিদেশি পর্যটকদেরও আনাগোনায় সারাবছর মুখরিত থাকে কক্সবাজার।
পর্যটকদের ভ্রমণবিলাসের অভিজ্ঞতা সুন্দর করে তুলতে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল ও রিসোর্ট। পুরো বছরজুড়েই বিভিন্ন ভ্রমণ এজেন্সির সৌজন্যে এসব হোটেলের রুম ভাড়ার ওপর বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নিই কক্সবাজারের চমৎকার কয়েকটি হোটেল এবং রিসোর্টের খোঁজ।
সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা
কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে ৫০ বিঘা আয়তনের বিশাল কম্পাউন্ড জুড়ে অবস্থিত এই রিসোর্টে আপনি পাবেন একপাশে সাগর আর অন্যপাশে পাহাড়ের সান্নিধ্যের মিশেলে দারুণ এক অভিজ্ঞতা। রিসোর্টটিতে আপনি উপভোগ করতে পারবেন প্রাইভেট বিচের সুবিধা। প্রাসাদসম এই হোটেলে রয়েছে ৪৯৩টি বিভিন্ন ধরনের রুম, যার মধ্যে হিল ভিউ এবং সি ভিউ রুম আছে। এখানে রয়েছে সুইমিং পুল ও জাকুজি, বার, কফিশপ, স্পা, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, থ্রিডি মুভি থিয়েটার, জিম, চিল্ড্রেন্স প্লেগ্রাউন্ডের সুবিধা।
কম্পাউন্ডের মধ্যে কর্পোরেট ইভেন্ট আয়োজনের জন্য রয়েছে ১০০০০ স্কয়ার ফিটের ওপেন স্পেস এবং দুটি সেমিনার রুম এবং একটি পৃথক বলরুম। আউটডোর অ্যাক্টিভিটির মধ্যে পাবেন প্যারাগ্লাইডিং, ডেড সি ফিশিং, স্পিডবোট রাইডের অনন্য সুবিধা। রিসোর্টের কম্পাউন্ড থেকে অদূরেই রয়েছে অনন্যসুন্দর হিমছড়ি ঝরনা। চাইলেই হাঁটা দূরত্বে ঘুরে আসতে পারেন বার্মিজ মার্কেটে। এই রিসোর্টে দারুণ একটা সময় কাটাতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
সায়মন বিচ রিসোর্ট
কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ রোডে অবস্থিত এই অভিজাত রিসোর্টের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এর প্রায় সব রুম থেকে অদূরের সমুদ্রসৈকত দেখা যায়। হোটেলটিতে মোট ২২৮টি রুম রয়েছে, যার মধ্যে ১৭৬টি সি-ভিউ রুম, ৩৬টি ডিলাক্স স্যুট, ১৬টি প্যানোরামা ওশেন স্যুট। অন্যান্য রুমের মধ্যে আছে সুপার ডিলাক্স টুইন/কিং, জুনিয়র স্যুট, ইনফিনিটি সি ভিউ। পুরো কম্পাউন্ড জুড়ে পাবেন বিলাসবহুল সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং, সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম সুবিধা।
রিসোর্টটিতে রয়েছে ৩টি রেস্তোরাঁ, বিস্তৃত সুইমিং পুল, কর্পোরেট ইভেন্ট আয়োজনের জন্য ৭০০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশাল কনভেনশান হল। এই রিসোর্টের দিনপ্রতি ভাড়া শুরু ১০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ভাড়া ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মারমেইড বিচ রিসোর্ট
কক্সবাজারের অন্য দশটা রিসোর্টের তুলনায় মারমেইড বিচ রিসোর্ট একটু আলাদা। কারণ এটি কক্সবাজারের ট্যুরিস্টস্পটগুলো থেকে বেশ দূরে পাতচর নামক জায়গায় বিশাল এলাকাজুড়ে সুদৃশ্য কাঠের কটেজ, ভিলা ও স্যুট নিয়ে গঠিত। জনসমাগম থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এখানে আপনি পাবেন নির্জনে বসে সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ।
আরো পড়ুন : চিত্রা হরিণ, শীতের পাখি আর শেয়ালের ডাক—নিঝুম দ্বীপের রোমাঞ্চ
কটেজের ভেতরে ও বাইরে সবকিছু কাঠ, বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে তৈরি। কটেজের বাইরে হ্যামকে দোল খেতে খেতে আলোছায়ার খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। সম্পূর্ণ রিসোর্টের সাজশয্যায় একটা প্রাকৃতিক ছোঁয়া পাওয়া যায় এবং একইসঙ্গে এখানে সবকিছু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। মারমেইড বিচ রিসোর্টে আপনি পাবেন চমৎকার সিফুড ডিনারের সুবিধা। এই ব্যবস্থা করা হয় নৌকার ওপরে।
অদূরে অবস্থিত হিমছড়ির ওপর দিয়ে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার কথা সারাজীবন মনে থাকবে। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সাইকেলের ব্যবস্থা রাখায় রিসোর্ট কম্পাউন্ডে এবং হিমছড়িতে প্যারাসাইক্লিং করার সুবিধাও রয়েছে। এই দারুণ রিসোর্টটিতে থাকতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার টাকা। মাঝেমধ্যেই তাদের ডিসকাউন্ট চলে। তখন বুক করলে রুম পেতে পারেন কম খরচে।
ওশ্যান প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট
কল্পনা করুন, আপনি রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে অদূরে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, আশেপাশে ঢেউয়ের শব্দ বাদে আর কোনো শব্দ নেই। কলাতলী সৈকতের পশ্চিমে দুই একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই রিসোর্টটিতে আপনি পাবেন এই মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতার সুযোগ। ২৯৬ রুম বিশিষ্ট এই হোটেলটিতে রয়েছে ফিটনেস সেন্টার, সুইমিং পুল ও জাকুজি, হেলিপ্যাড, বলরুম, মাল্টিকুইজিন রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে, রুফটপ সাইবার রেস্তোরাঁ, বোটহাউজসহ আধুনিক সব সুবিধা।
বিভিন্ন ধরনের রুমের মধ্যে রয়েছে ডিলাক্স সি ভিউ, সুপিরিয়র সি ভিউ, সুপিরিয়র পুল ভিউ, এক্সিকিউটিভ স্যুট ইত্যাদি বিলাসবহুল রুম। সৈকতের স্বর্গীয় সৌন্দর্যের মধ্যে এই দারুণ অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে রুম বুকিং দিতে পারবেন সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকার মধ্যে।
লং বিচ হোটেল
লং বিচ হোটেল কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২.৫ কিলোমিটার দূরে এবং বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরত্বে কলাতলীতে অবস্থিত। হোটেল থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বেই সৈকত। মধুচন্দ্রিমা বা পারিবারিক অথবা ব্যবসায়িক সফর, সবকিছুর জন্যই উপযুক্ত এই হোটেল আপনাকে দেবে সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং এবং হিটিং সিস্টেম, ইন্ডোর সুইমিং পুল, ফিটনেস সেন্টার, স্পার অনন্য সুবিধা।
হোটেলের সঙ্গে লাগোয়া একটি দারুণ গিফট শপও রয়েছে। লং বিচ হোটেলে রুম ভাড়া শুরু হয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। বিভিন্ন ধরনের কক্ষের মধ্যে রয়েছে প্রিমিয়ার রুম, সুপিরিয়র ডিলাক্স রুম, এক্সিকিউটিভ রুম, হানিমুন স্যুট, প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট ইত্যাদি।
নিসর্গ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট
নিসর্গ রিসোর্ট কলাতলী থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মেরিন ড্রাইভ রোডে অবস্থিত একটি রিসোর্ট, যার প্রতিটি কক্ষ থেকে আপনি সৈকত দেখতে পাবেন। এখানে প্রতিটি সকালবেলা আপনার ঘুম ভাঙবে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দে। রুমগুলোর আকার ৫০০ থেকে ৮০০ স্কয়ার ফিট এবং প্রতিটি রুমে ব্যালকনি ও লিভিং স্পেস রয়েছে। রিসোর্টটিতে সূর্যাস্তপ্রেমীদের জন্য রয়েছে ইনফিনিটি রুফটপ সুইমিংপুল। শান্ত পরিবেশে গোধূলীর লালচে আকাশের নিচে সুইমিংপুলে আয়েশ করে বসে পছন্দের বেভারেজে চুমুক দিতে দিতে সূর্যাস্ত দেখতে মন্দ লাগবে না।
রিসোর্টটির খাবার মানসম্পন্ন এবং নিয়মিত কক্সবাজার যারা ঘুরতে আসেন তাদের কাছে বহুল জনপ্রিয়। নিসর্গ রিসোর্টের রুমপ্রতি দৈনিক চার্জ সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু, সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। বিভিন্ন ধরনের রুমের মধ্যে আছে ডিলাক্স সুপিরিয়র ভিউ (সি- ভিউ), স্ট্যান্ডার্ড স্যুট (হিল ভিউ), হানিমুন স্যুট ইত্যাদি।
হোটেল সিগাল
কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত এই হোটেলেও আপনি নিজস্ব প্রাইভেট বিচের সুবিধা পাবেন। ১৮২টি রুম ও অভিজাত স্যুটের সমন্বয়ে এই হোটেলটি গঠিত। হোটেল সিগাল ট্যুরিস্টদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ট্যুর সুবিধাও দিয়ে থাকে, যেন থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ট্যুরিস্টরা আয়েশ করে কক্সবাজার ঘুরে দেখতে পারেন।
এ ছাড়াও হোটেলটিতে রয়েছে ফিটনেস সেন্টার, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রেস্তোরাঁ, স্পা সার্ভিস, কিডস প্লে-জোন, বিজনেস সেন্টার। হোটেল সিগালের মধুরিমা স্যুটটি ১৮০০ স্কয়ার ফিটের মার্বেল পাথরের ফিটিংয়ের একটি সুদৃশ্য হানিমুন স্যুট, যা নির্মাণশৈলীর দিক থেকে অন্য সব রিসোর্টের স্যুটের চেয়ে অনন্য। রিসোর্টটির প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে বারান্দা সংযুক্ত। রুমভাড়া ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
প্রাসাদ প্যারাডাইস
এই রিসোর্টটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, মূল হোটেলের ৭ তলা ভবনে ৪৪টি কক্ষ ও স্যুটের পাশাপাশি ৪০টি কটেজ এবং ১০টি গার্ডেন বাংলো রয়েছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের কক্সবাজারের ভ্রমণের আনন্দ বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে। টাওয়ার রুমগুলোর (ডিলাক্স/ সুপার ডিলাক্স- টুইন/ ট্রিপল/ হানিমুন স্যুট) ভাড়া ৭ হাজার ৩৩৭ টাকা থেকে ১৩ হাজার ৯১৫ টাকা পর্যন্ত, অন্যদিকে কটেজের ভাড়া ৬ হাজার ৩০১ টাকা থেকে ২৯ হাজার ৬০১ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। রিসোর্টটিতে রয়েছে রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল, কনফারেন্স রুমসহ আরও দারুণ সব সুবিধা।
হোটেল দ্য কক্স টুডে
হোটেল দ্য কক্স টুডের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর আলাদা করে প্রশংসা না করলেই নয়, যা কক্সবাজারের সাগর-পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়। বুফে রেস্তোরাঁ, থাই স্পা, সুইমিং পুলের সুবিধাসম্পন্ন এই রিসোর্টের বিভিন্ন রুম ও স্যুট ভাড়া নেওয়ার জন্য খরচ হবে ন্যূনতম ১০ হাজার ১২৮ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৩ হাজার ৭৪৯ টাকার মধ্যে।
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন