শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীন আফগানিস্তানে বিনিয়োগ বাড়ালেও সন্ত্রাসী চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৭ অপরাহ্ন, ১৭ই জুলাই ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, চীনা কোম্পানিগুলো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে আফগানিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে কিন্তু সন্ত্রাসবাদ এবং অস্থিতিশীলতার কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

আফগানিস্তান সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, চীন আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য "সাধ্যমত চেষ্টা করবে"।

২০১৩ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং সিপিইসি সংযোগ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পে ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বনিয়োগ করেন। যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। এই উদ্যোগটি বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে চীনকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত অবকাঠামো প্রকল্প এবং বিনিয়োগের একটি সিরিজ।

গত সপ্তাহে, কাবুলে তালেবান কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠকে, ফ্যান চায়না আফগান মাইনিং প্রসেসিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানির কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে নির্মাণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানাচ্ছে গণমাধ্যম।

এই চুক্তিটি চীনের জিনজিয়াং সেন্ট্রাল এশিয়া পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড গ্যাস কোং (CAPEIC) এবং আফগানিস্তানের ওয়াতান গ্রুপের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ।

জানুয়ারিতে, তালেবানরা CAPEIC এর সাথে বার্ষিক ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে দেশের উত্তরে তেল উত্তোলনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

চীনও আফগানিস্তানে খনি উন্নয়ন ও পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। একটি চীনা কোম্পানি, মেটালার্জিক্যাল কর্পোরেশন অফ চায়না (এমসিসি), লোগার প্রদেশের মেস আইনাক থেকে তামা উত্তোলনের জন্য ২০০৮ সালে তৎকালীন আফগান সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।

গত মাসে, তালেবানের খনি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী, শাহাবুদ্দিন দেলাওয়ার, এমসিসি-কে খনির উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য "ব্যবহারিক" কাজ শুরু করার আহ্বান জানান।

গণমাধ্যমকে বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) আফগানিস্তানে সম্প্রসারিত করার চুক্তিতে তালেবানরা কূটনৈতিক জয়লাভ করতে পারে, কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

ইসলামাবাদে তিন দেশের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর মে মাসে প্রকাশিত একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "তিন পক্ষই আঞ্চলিক সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে আফগানিস্তানের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে তাদের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে।"

তবে তালেবান সরকারের অধীনে বিনিয়োগ করা একাধিক নিরাপত্তা উদ্বেগও নিয়ে আসে। কারণ গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তালেবানের এখনও আল-কায়েদা এবং ইস্টার্ন তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে, যা তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি নামেও পরিচিত।

চীন ইটিআইএম সম্পর্কে ধারণা করে, এই সংগঠন পাকিস্তানে ১৯৯৭ সালে উইঘুর ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হাসান মাহসুম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং এটি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে তার সন্ত্রাসী তালিকা থেকে ETIM কে সরিয়ে দিয়েছে।

এবিষয়ে আফগানিস্তানের প্রাক্তন পরিবহন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হামিদুল্লাহ ফারুকি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, তালেবান চীন ও পাকিস্তানকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে যে "তারা তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ সমাধান করতে পারে এবং কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আফগান মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।"

ফারুকি আরও বলেন, আমি মনে করি না যে চীনা এবং পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এটা বিশ্বাস করে। যার জন্য তালেবানদের তাদের সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

ফারুকি জানান যে, আফগানিস্তানে CPEC-এর সম্প্রসারণকে "তালেবানের দখলের কয়েক বছর আগে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এটি বাস্তবায়িত হয়নি।"


চীন আফগানিস্তান

খবরটি শেয়ার করুন