সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনে মসজিদ ভাঙা নিয়ে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:১৮ অপরাহ্ন, ৩১শে মে ২০২৩

#

ছবি: বিবিসি থেকে নেওয়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মসজিদের সামনে প্রচুর লোকজনকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

চীনের ইউনান প্রদেশে মুসলমান অধ্যুষিত একটি বড় শহরে ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদের গম্বুজ পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

নাগু শহরের নাজিয়াং মসজিদটি ত্রায়োদশ শতকে নির্মিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে গত শনিবার ওই মসজিদের সামনে প্রচুর লোকজনকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বলে জানায় বিবিসি।

এক পর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের আটকাতে সেখানে শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ইউনান দক্ষিণ চীনের একটি জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় প্রদেশে। যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুসলমান জনসংখ্যা রয়েছে।

চীন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নাস্তিক দেশ এবং দেশটির সরকার দাবি করে, সেখানে সব ধর্মের চর্চায় স্বাধীনতা রয়েছে।

কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশটিতে গত কয়েক বছরে সুসংগঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন বেড়েছে। কারণ, বেইজিং পুরো দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ আরো শক্ত করতে চাইছে।

নাগু শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে নাজিয়াং মসজিদটি অন্যতম। সম্প্রতি বেশকিছু সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদটি আরো বড় করা হয়ছে। নতুন একটি গম্বুজ তৈরির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে।

কিন্তু ২০২০ সালে চীনের একটি আদালত মসজিদের বর্ধিত অংশকে অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়।

আদালতের আদেশ পালনে স্থানীয় প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং তারা বিক্ষোভ শুরু করে।

গত শনিবারের যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে সেগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল পুলিশ সারি বেঁধে মসজিদের প্রবেশ পথ আটকে রেখেছে। এবং স্থানীয়দের একটি দল পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মসজিদের ভেতর জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গন থেকে সরে যাচ্ছে, যাতে ভিড় করা লোকজন নাজিয়াং মসজিদে প্রবেশ করতে পারে।

পরে রোববার তংহাই কাউন্টি পুলিশের পক্ষ থেকে নোটিস জারি করে আগামী ৬ জুনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাগু শহর তাংহাই কাউন্টির মধ্যে।

পুলিশ এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানায় বিবিসি।

নোটিসে বলা হয়, ‘‘যারা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে সত্যিকারে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেবে তাদের কম সাজা দেওয়া হতে পারে।”

তারা এই ঘটনাকে ‘সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যবস্থার একটি গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। স্থানীয়দের বিক্ষোভের বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

চীনে জনবিক্ষোভের ঘটনা তেমন একটা দেখা যায় না। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সরকারের আরোপ করা কঠোর লকডাউনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় জনগণকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তাদের প্রায়শই চীনা মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বহু শতাব্দীর আন্তঃবিবাহ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে তারা চীনা সমাজে নিজেদের ভালোভাবে একীভূত করেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং দেশটির ধর্মীয় নানা সম্প্রদায় এবং তাদের সমাজ ব্যবস্থার উপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ চাইছে।

চীনে যে ৫৬টি আদিবাসী সম্প্রদায়কে বেইজিং স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের একটি হুই সম্প্রদায়। হুইরা মূলত সুন্নি মুসলমান। চীনে প্রায় এক কোটি হুই মুসলমান রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাত লাখের বাস দক্ষিণ-পশ্চিশের ইউনান প্রদেশ।

এম এইচ ডি/আইকেজে 

চীন মসজিদ ভাঙা পুলিশ বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ বেইজিং হুই সম্প্রদায় সুন্নি মুসলমান

খবরটি শেয়ার করুন