ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে দেশে খেলাপি ঋণের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে পুনঃ তফসিল ঋণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা, যেখানে পুনঃ তফসিল ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ এসব তথ্য পাওয়া গেছে, যা রবিবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, ব্যাংকগুলো সর্বশেষ ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে। আবার ব্যাংকগুলো নিজেরাও পুনঃ তফসিল করেছে। ফলে এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। এরপরও গত বছরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। পুনঃ তফসিল করা ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশের কাছাকাছি হতো।
ব্যাংকগুলো এত খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করার ফলে গত বছর তাদের নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ৫ হাজার ২২ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি কমে ৮ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় নামে, যা ২০২১ সালে ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকের মুনাফা বেশি হলে মালিক ও শেয়ারধারীরা যেমন বেশি মুনাফা পান, তেমনি সরকারও বেশি কর পায়।
এদিকে গত বছরের শেষে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ফলে খেলাপি ঋণের চেয়ে পুনঃ তফসিল করা ঋণ এখন বেশি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়ে রেখেছে। আইএমএফ পুনঃ তফসিল করা ঋণ ও আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া ঋণকে খেলাপি হিসেবে দেখানোর পক্ষে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুনঃ তফসিল করা ঋণও খেলাপি, আইএমএফ এ কথাই বলে। পুনঃ তফসিল করা ঋণ হিসাবে ধরলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ২৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখলাম পুনঃ তফসিলের হার ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গড় খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের একটু কম। এর বাইরে মামলায় আটকা আরও ১ লাখ কোটি টাকা।’
আহসান মনসুর আরও বলেন, ‘কার্পেটের নিচে ময়লা রাখলে কি আর ঘর পরিষ্কার হয়? ময়লা তো ঘরে থেকেই যায়। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এসব বলে সর্বনাশ করে ফেলেছে। পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি ছাড়া চোখের সামনে কোনো আশাবাদ নেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করে আর্থিক প্রতিবেদন থেকে মুছে ফলা হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত যা ছিল ৬০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। এই বছরে পুনঃ তফসিল করা হয় ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে পুনঃ তফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। পুনঃ তফসিল করা ঋণের ৭১ শতাংশ বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর, ২৪ শতাংশ সরকারি ব্যাংকগুলোয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুনঃ তফসিল করা ঋণের ২০ শতাংশ আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে। ৮০ শতাংশ ঋণ নিয়মিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে শিল্প খাতে। পুনঃ তফসিল করা ঋণের প্রায় ৩১ শতাংশ শিল্প খাতের। এরপরই রয়েছে পোশাক ও টেক্সটাইল খাত। পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে রয়েছে পুনঃ তফসিল করা ঋণের ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাণিজ্যিক ঋণ ও চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে এই হার ৯ শতাংশ। তবে এখন সবচেয়ে বেশি পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দেখা যায় জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ খাতে, যা প্রায় ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এম.এস.এইচ/
খবরটি শেয়ার করুন