বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধানমন্ডিতে গাছ কাটা বন্ধ না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:৪১ অপরাহ্ন, ৯ই মে ২০২৩

#

ছবি: জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা।

রাজধানী ঢাকায় সবুজ রক্ষা করা ও গাছ কাটা বন্ধ না করলে এই শহর আর কখনো বাসযোগ্য হবে না। কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়া মনগড়া যুক্তি দিয়ে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত সচেতন মানুষ মেনে নিতে পারে না। এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। না হলে লাগাতার কঠোর আন্দোলন চলবে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যরা। ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোড এলাকায় সড়ক বিভাজকের গাছ কাটার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কমিটি। তারা সাত মসজিদ সড়ক বিভাজকের গাছ কাটা বন্ধ এবং সেখানে পুনরায় গাছ রোপণের দাবি জানান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘১৯৬১ সাল থেকে ধানমন্ডিতে আছি, তবে সব গাছ কেটে ফেলার মতো এমন নৃশংসতা আগে দেখিনি। প্রকৃতি আমাদের জীবনের অংশ। যারা গাছ কাটছে তারা কি তাদের স্কুলজীবনে বেসিক বিজ্ঞান পড়েনি! প্রকৃতিতে আমাদের বাঁচতে হলে গাছ বাঁচাতে হবে, আর গাছ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।’

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংসের বিপরীতে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের পরিকল্পনায় জনগণের মতামত প্রতিফলিত হতে হবে। প্রকৃতি ধ্বংস আইনত অপরাধ হলে গাছ কাটা কেন শাস্তির আওতায় আসবে না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘গত পাঁচ দিনে ধানমন্ডিতে যে তাণ্ডব দেখলাম, তা শুধু এই নগর প্রশাসন দ্বারাই সম্ভব। যে নগর প্রশাসন কারও কথা শোনে না। একটি নগর প্রশাসনের কাছে মানুষ স্বস্তি আশা করে, শান্তি আশা করে। তবে এই নগর প্রশাসন নগরবাসীকে অশান্তি দিচ্ছে। তারা ধানমন্ডি এলাকায় আমাদের কারো কথা শোনেনি, কারো কথা মানেনি, নির্বিচারে গাছ কেটেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। জনগণের করের টাকার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করছে না প্রতিষ্ঠানটি।’

আরো পড়ুন: তাপ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার প্রথম চিফ হিট অফিসার নিয়োগ

সেন্ট্রাল এসি ব্যবহার করার সামর্থ্য সবার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চান, বানান এতে আমাদের সমস্যা নেই। তবে যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, সেগুলো মানুষকে অক্সিজেন দেয়ার পাশাপাশি ছায়া দিচ্ছিল। অথচ সেই গাছগুলো নির্বিচারে কেটে দেয়া হয়েছে।’ এ সময় ঢাকায় আর গাছ কাটার দুঃসাহস না দেখানোর হুঁশিয়ারি দেন বেলার প্রধান নির্বাহী।

অভিনয়শিল্পী, নাট্যনির্দেশক ও সংগঠক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ধানমন্ডি-২ নম্বর থেকে শুরু করে ২৭-এর শেষ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩০০ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মানুষ কি শুধু খাবেই? খাওয়া ছাড়া কি আর কোনো কিছু পাবে না তারা? শুধু ঢাকা শহরে নয়, দেশের যত গাছ আছে তা বাঁচাতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে গাছ কাটা হবে, সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।’

আন্দোলন সমন্বয়কারী আমীরুল রাজীব বলেন, ‘বর্তমানে সাত মসজিদ রাস্তায় যে ৩০টি গাছ রয়েছে, তা ঐতিহ্য হিসেবে রক্ষায় আমরা কাজ করছি। রাতে সবাই মিলে পাহারা দিচ্ছি। আমাদের দাবি একটাই—এই সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। আবার নতুন করে গাছও রোপণ করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন নারীপক্ষের সদস্য শিরিন পি হক, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ, নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহম্মদ খান এবং শিক্ষার্থী ও আন্দোলন সংগঠক আদৃতা রায়।

সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে দেখা করতে নগর ভবনে যান আন্দোলনকারীরা। এ সময় মেয়রকে না পেয়ে তারা সহকারী একান্ত সচিব নাছিরুল হাসান সজীবের কাছে ৩৭ বিশিষ্ট নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত চিঠি দিয়ে আসেন।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

গাছ কাটা ঢাকা ধানমন্ডি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র রাজধানী

খবরটি শেয়ার করুন