ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্র গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবউল আলম হানিফ।
রবিবার (২০ আগস্ট) সকালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্র যেসব দেশে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে গিয়েছে সেসব দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। চোখ খুলে তাকালে দেখা যায় আজকে মুসলিম বিশ্বকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশরকে তছনছ করে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এরা মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। এই পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্র তাদের ক্ষমতা জাহির করার জন্য, তাদের নিয়ন্ত্রণের আজ্ঞাবহ সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই দেশগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে তাদের চোখ পড়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত আছে। এই পশ্চিমা শক্তির চোখ রাঙানিতে, ধমকে মাথা নত করার মত মানুষ নয়, তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন।
পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আজকে যারা আমাদের সবক দেন। গণতন্ত্র শিখাচ্ছেন, মানবতার সবক দিচ্ছেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা কোথায় ছিল আপনাদের মানবতা। যখন পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের নারী, শিশুসহ হত্যা করা হয়েছিল। তখন কোথায় ছিল আপনাদের মানবতা। তখন তো মানবতা চোখে পড়েনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর নিষ্ঠুরভাবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যখন নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করেছিল। নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে মানুষ হত্যা করেছিল। তখন কোথায় ছিল মানবতা। তখন তো কিছু বলেননি আপনারা।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে দেশের প্রায় ১০ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। অজস্র মেয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৯ বার হামলা হয়েছিল। কোথায় ছিল আপনাদের মানবতার সংজ্ঞা, আইনের শাসন। আর এখন আপনারা গণতন্ত্র, মানবতার সবক দিতে আসেন। কথায় কথায় গণতন্ত্রের দোহাই দেন।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই বাংলাদেশের ক্ষমতার মালিক এ দেশের জনগণ। জনগণ যতদিন শেখ হাসিনার সাথে আছে ততদিন আওয়ামী লীগ সরকারকে কেউ ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না। যে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ সরকারের সাথে থাকে সেই সরকারের পতন ঘটানো যায় না। দুর্নীতিবাজ, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা খালেদা জিয়া আর খুনি সন্ত্রাসী তারেক রহমান লন্ডনে বসে লবিস্ট নিয়োগ করে স্বপ্ন দেখছেন ক্ষমতায় আসবেন। ক্ষমতায় আসা এত সহজ নয়।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর থেকে বাঙালি জাতি ছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও পশ্চিম পাকিস্তান শুরু থেকেই আমাদের শোষণ করেছিল। শুরু থেকেই বৈষম্যমূলক আচরণ ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তখন থেকেই তিনি প্রতিবাদ করেছেন। ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২'র শিক্ষা ও ছয় দফার মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালি জাতির মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ার স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।
হানিফ বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম শেষে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে সাড়ে তিন বছরে সকল সেক্টর পুনর্গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, স্বাধীনতার মূল চেতনাকে হত্যা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য তাকে হত্যা করা হয়নি। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান ও তাদের দোসর পশ্চিমা মহাশক্তিধর রাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূল নেপথ্যে ছিলেন জিয়াউর রহমান- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা আত্মস্বীকৃত খুনি তারা ছিল ভাড়াটে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল কুশীলব ছিল জিয়াউর রহমান। আত্মস্বীকৃত খুনিদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালে মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে এজন্য ইনডেমনিটি জারি করে বিচারের পথ বন্ধ করেছিল। আমরা বারবার দাবি করেছি আজকের এ সভা থেকেও দাবি করে যাচ্ছি, জাতি জানতে চায় এই হত্যাকাণ্ডের মূল কুশীলব কারা ছিল। অতি দ্রুত তদন্ত কমিশন গঠন করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক। জাতির পিতাকে সপিরবার কেন, কী জন্য হত্যা করা হয়েছে জাতি জানুক।
হানিফ বলেন, কেন কী কারণে বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতাকে হত্যা করা হয়েছে? এটা কি শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য? পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্ষমতা দখলের জন্য অনেক সময় রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করার নিদর্শন আছে। কিন্তু পরিবারের নারী, শিশুসহ জাতির পিতাকে হত্যার নজির নেই। এ হত্যাকাণ্ড ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে পাকিস্তান এবং পৃষ্ঠপোষকরা পরাজিত হয়েছিল তাদের পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ। এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হত্যার জন্য। এই বাংলাদেশকে আবার পরাধীন রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছদ্মবেশী এজেন্ট হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট এবং এজেন্ট থেকেই এ দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রধান কুশীলব-চক্রান্তকারী হিসেবে কাজ করে গেছেন।
জিয়াউর রহমান নামে মুক্তিযোদ্ধা, চেতনায় পাকিস্তানি ছিলেন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, আর তাই দালাল আইন বাতিল করে সাড়ে ১১ হাজার রাজাকারকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ, এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সারা বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পদকপ্রাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করে। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই পদক বঙ্গবন্ধুকে তুলে দেন বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশ চন্দ্র। ওই অনুষ্ঠানে রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘হি ইজ ম্যান অব পিস, ম্যান অব ইনডিপেনডেন্ট। নাউ হি ইজ দ্যা বিশ্ববন্ধু। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং বিশ্ববন্ধু।’
হানিফ বলেন, বিএনপি নেতারা বলছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশে আপনারা নিয়ে যেতে চান? ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বাংলাদেশ নাকি পঁচাত্তর পরবর্তী জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে উন্নয়ন-অগ্রগতি নাই। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের চারণভূমি বানিয়েছিল। এই রকম জঙ্গিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না।
দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সমস্ত অপশক্তিকে পরাজিত করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আজকের এই দিনে শোককে শক্তিতে পরিণত করে এই অশুভ শক্তিকে রাজপথে প্রতিহত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো, এটাই হোক আমাদের শপথ।
আর.এইচ