সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুকুরে একসাথে মলা ও তেলাপিয়া মাছের চাষ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৩ অপরাহ্ন, ১৬ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি-সংগৃহীত

মলা ও তেলাপিয়া মাছ বেশ জনপ্রিয়। এই মাছ অনেক পুষ্টিকর ও সহজে চাষ করা যায়। প্রায় সব বাজারেই এই মাছ পাওয়া যায় এবং এই মাছের চাহিদাও বেশি।

পুকুরে মলা মাছের সাথে তেলাপিয়া মাছের চাষ করার উপায় আমাদের দেশের অনেক মৎস্য চাষিরাই জানেন না। নদী-নালায় মাছ কমে যাওয়ায় এখন অনেকেই তাদের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। পুকুরে চাষ হওয়া মাছগুলোর মধ্যে তেলাপিয়া অন্যতম। 

অনেক শিক্ষিত বেকার এই মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই নিবন্ধে মলা ও তেলাপিয়া মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

১) পুকুরে প্রথমে মলা মাছ ছাড়তে হবে তারপর তেলাপিয়া ছাড়তে হবে।

২) মলা বড় হলে তা জাল টেনে ধরে বিক্রি করে দিতে হবে।

৩) মলা মাছে লাভের পরিমাণটাও অনেক বেশি হবে।

৪) মলা মাছের চাষের সময়কাল কম।

চাষ-পদ্ধতি

প্রথমে পুকুরে বিষটোপ দিয়ে অবাঞ্ছিত মাছ দূর করে তারপরের দিন পুকুরের তলদেশের অবস্থা বুঝে শতাংশ প্রতি আধা কেজি থেকে এক কেজি চুন দিয়ে এর ৬ থেকে ৭ দিন পর শতাংশ প্রতি ০.৩ মি.লি. পিপিএম হারে সুমিথিয়ন দিয়ে তার একদিন পর পুকুরে মলা মাছের রেনু দিতে হবে। আমাদের বর্তমান চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি ৫০ শতাংশের পুকুরে এক হাপা মলা মাছের রেনু দিতে হবে।

রেনু ছাড়ার পর থেকে ডিম সিদ্ধ করে ২ দিন খাওয়ানোর পর তৃতীয় দিন থেকে নার্সারি পাউডার ৪ ঘণ্টা আগে থেকে ভিজিয়ে দিনে দুইবার (সকাল দশটায় একবার ও বিকেল পাঁচ টায়) দিতে হবে। এভাবে ২৫ থেকে ৩০ দিন রেনুকে খাওয়ালে পরে ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি সাইজে পরিণত হবে। তারপর এই মলা মাছের উপর  মনোসেক্স পোনা ছাড়তে হবে।

খাদ্য:

পুকুরে মাছ চাষের সময় মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার ১ দিন পর থেকে প্রতিদিন পুকুরে উপস্থিত মাছের ওজনের ৪-৬ ভাগ হারে চালের কুড়া দিতে হবে। পুকুরের মাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের খাদ্য হিসেবে পরিচিত যে কোনও ধরনের খাবারই দেওয়া যেতে পারে।

নার্সিং এ ৪-৫ সপ্তাহ এবং পরে লালন কালে ২৫-৩০% প্রোটিনসমৃদ্ধ ভাসমান খাবার প্রয়োগ করতে হয়। এতে ফলন আরও ভাল হয়।

পরিচর্যা:

পোনা মজুতের ১ মাস পর থেকে প্রতি ডেসিমেলে ১ মিটার জলের গভীরতায় ১০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে। জলের পিএইচ দেখে পরিমাণ কম বেশি করতে হবে। প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

খাবার প্রয়োগের ১ ঘন্টা পর পুকুর পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি পুকুরে খাবার পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে পুকুর অথবা মাছের কোনও সমস্যা হয়েছে অথবা খাবার বেশি দেওয়া হচ্ছে।

একটানা মেঘলা আবহাওয়া কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে অথবা খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। জলজ পাখি এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে দেয়।

তাই, পুকুরে পাখির অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য সারা পুকুরের উপর আড়াআড়িভাবে রঙিন রশ্মি বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া যেতে পারে।

আরো পড়ুন: কিশোরগঞ্জে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল চাষিরা

সংগ্রহ:

মলা মাছের বয়স যখন ৯০ দিন পূর্ণ হবে সেদিন মলা মাছ বাজারজাত করার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তেলাপিয়ার বাজারজাত হবে আরও পরে। ঠিকভাবে পারিপালিত হলে ৯০ দিন পর মলা মাছ ২০০ থেকে ৩০০ পিসে কেজি হবে।

এভাবে মলা মাছের বয়স ৯০ দিন হলে পরে আনুমানিক ৯০% মলা বিক্রি করে দিয়ে ১০% মলা মাছ তেলাপিয়ার সাথে রেখে দিতে হবে। তারপর তেলাপিয়াকে সাইজ হওয়ার আগ পর্যন্ত চাষে রেখে দিতে হবে ৫০ কেজি উৎপাদন হওয়ার আগ পর্যন্ত।

কারণ শতাংশ প্রতি তেলাপিয়া ৫০ কেজি উৎপাদন হয়ে গেলে আর বেশি একটা উৎপাদন হয় না সাধারণ পদ্ধতিতে। তাই, এই ২ মাছ একসাথে পুকুরে চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন |

এসি/ আই. কে. জে/ 




তেলাপিয়া মাছের চাষ পুকুর

খবরটি শেয়ার করুন