সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেম নাকি অন্য কোনো কারণে বরখাস্ত হলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:১৫ অপরাহ্ন, ২৬শে জুলাই ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

চীনে উদীয়মান এক তারকার পতন হলো। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হলো কিন গাং’কে। অথচ তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অতি ঘনিষ্ঠ। তার ওপর ভরসা রেখে বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল সময়ে কূটনৈতিকভাবে চীনকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ এমন কি হলো, যার জন্য বরখাস্ত করা হলো শি জিনপিংয়ের এত ঘনিষ্ঠ কূটনীতিককে।

এরই মধ্যে বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কের এক গুজব শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে তা। এতে বলা হয়েছে, ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও টেলিভিশনের একজন উপস্থাপিকার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েছেন। ওই উপস্থাপিকাও সামাজিক মাধ্যমে ছিলেন সক্রিয়। কিন্তু কিছুদিন ধরে তিনিও লাপাত্তা।

ফলে ঠিক এক মাসের মাথায় কিন গাংকে বরখাস্ত করার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন নেটিজেনরা। এ খবর দিয়েছে বিবিসি অনলাইন।

এতে বলা হয়, কিন গাংয়ের অপসারণ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে শোরগোল তৈরি হলেও, চীনে গতানুগতিক নীরবতার মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। কি কারণে তাকে বরখাস্ত করা হলো তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি চীন সরকার। মঙ্গলবার সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তাকে বরখাস্তের খবর জানায়। দেড় বছর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর বিশ্বে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন কিন গাং।

এক মাস আগে থেকে তাকে সরকারি কোনও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে তার স্বাস্থ্যগত জটিলতার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কি সমস্যায় ভুগছেন তিনি তার কিছুই জানানো হয়নি। তিনি এবং রাষ্ট্র, উভয় পক্ষই এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে। 

কয়েক সপ্তাহ পার হওয়ার পরেও যখন তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না, তখন ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়। বলা হয়, রাজনৈতিক কোনও কারণে হয়তো তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে টেলিভিশন উপস্থাপিকার সাথে তার প্রেমের খবর প্রকাশ পায়। বলা হয়, এর জের ধরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

চীনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন, এমন কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করেন একই সময়ে এ দু’টি ঘটনার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার বিরোধীপক্ষ নৈতিকতার কারণ দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। উপস্থাপিকার সঙ্গে যে সম্পর্ক তা চীনে বেআইনি নয়। কিন্তু একে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসাবে দেখা হতে পারে।

আবার স্বাস্থ্যগত জটিলতার যে কথা বলা হয়েছে, সেটাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চীনের শাসন ব্যবস্থার অস্বচ্ছতার কারণে এসব সম্ভাবনার কথা যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, আবার একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায় না। কিন গাংয়ের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সবাই অবাক হয়েছে এই কারণে যে, তার পেছনে চীনের সব ক্ষমতাবান ব্যক্তির সমর্থন আছে বলে মনে করা হতো। 

চীনের রাষ্ট্রদূত হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সময় তাকে ফিরিয়ে নেয়া হয় চীনে। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন দেশের সর্বোচ্চ নেতা শি জিনপিং। এরপর থেকে বিশ্লেষকরা তার দিকে নজর রাখছিলেন যে, নতুন দায়িত্বে তিনি কতটা কঠোর বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হয়ে উঠতে পারেন। 

চীনের যেসব কূটনীতিক চীনের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন, তাদেরকে পশ্চিমারা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ বলে বর্ণনা করে থাকে। চীনের দিক থেকে মনোযোগ সরাতে যদি কাউকে গালি দেয়ারও দরকার হয়, তাতেও তারা পিছপা হন না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসাবে যখন তিনি কাজ করতেন, সে সময় থেকে চীনের সমর্থনে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন কিন গাং। সেই সঙ্গে তিনি নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে তুলে ধরেছিলেন, যিনি অন্যদের আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেন। 

আরো পড়ুন: বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিল বিরোধীরা

ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে সক্ষমতা এবং উৎসাহী ক্রীড়া অনুরাগী কিন গাংকে যুক্তরাষ্ট্রে এনবিএ খেলার সময় ফ্রি থ্রো লাইন থেকে শট নিতে দেখা গেছে। অথবা তার আগে যুক্তরাজ্যে দায়িত্ব পালনের সময় তার প্রিয় দল আর্সেনালের পক্ষে উল্লাস করতে দেখা গেছে। হয়তো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কোন কোন নেতা এ ধরনের ব্যক্তিকে যথেষ্ট কঠোর বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ বলে মনে করেন না। 

তিনি বার বার অত্যন্ত জোরের সাথে নিজের দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং অন্যদের কাছে যতটা সম্ভব ভালোভাবে দেশকে উপস্থাপন করেছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির যে ধরনের আধুনিক, মার্জিত কর্মী দরকার ছিল, তিনি সেরকম একজন বলেই মনে করা হচ্ছিল। তাকে তারা নানাভাবে ব্যবহার করতে পারতো। কিন্তু এখন কিন গাংয়ের ভাগ্যে কি ঘটবে, তা কারো জানা নেই। তার সম্পর্কে সব তথ্য এর মধ্যেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। বিবিসি লিখেছে, একে যেভাবেই নেয়া হোক না কেন, এর ফলাফল ভালো হতে পারে না।

এসি/ আইকেজে 

চীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

খবরটি শেয়ার করুন