ছবি: সংগৃহীত
আমরা প্রায়ই কিছু না কিছু পড়ি। কেউ অ্যাকাডেমিক বই পড়ি, কেউ গল্প বা উপন্যাসের বই পড়ি। কেউ সাইন্স ফিকশন, ম্যাগাজিন, পত্রিকা, ব্লগ ইত্যাদি পড়ি। এত কিছু পড়ার পরেও খুব সামান্য কিছু মনে রাখতে পারি। আবার কিছু পড়া কিছু দিন পর একেবারেই ভুলে যাই। কিন্তু কিছু পড়া অনেক দিন মনে থাকে। এমন কেন হয়?
আমরা অনেকেই বিভিন্নভাবে পড়তে অভ্যস্ত। যেমন কেউ উচ্চস্বরে পড়ি, কেউ মনে মনে পড়ি, কেউ লিখে লিখে পড়ি, কেউ শুয়ে শুয়ে পড়ি। কিন্তু কোন পড়ার স্টাইলটা বেশি কার্যকর? আসলে এখানে কোন পড়ার স্টাইলই বেশি কার্যকর নয়।
কারণ, আপনি উচ্চস্বরে পড়লে কিছুক্ষণ পড়ে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। মনে মনে পড়লে অনেকক্ষণ পড়তে পারবেন, কিন্তু মনোযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন না। কারণ, মন যখন শান্ত থাকে- তখন মনে অনেক ভাবনা-চিন্তা চলে আসে। এতে অন্য দিকে মনোযোগ চলে যায়। আর আপনি লিখে লিখে পড়লে অন্যগুলোর চেয়ে ভালো করবেন এবং বানান শুদ্ধ করতে পারবেন। কিন্তু এটাই পড়া দীর্ঘক্ষণ মনে রাখার একমাত্র উপায় নয়। আর শুয়ে শুয়ে পড়ার উদ্দেশ্যই থাকে ঘুমানোর। আপনি যদি নাও ঘুমাতে চান, তারপরও আপনি ঘুমাতে বাধ্য। কারণ আপনি ঘুমানোর জন্য নিজেকে একধাপ এগিয়ে রাখছেন। তাহলে উপায়? আসুন জেনে নিই পড়া মনে রাখার কিছু কলাকৌশল-
প্রবল ইচ্ছা বা আগ্রহ : আপনি যখন পড়বেন তখন আপনার জানার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকতে হবে। আপনি ক্ষুধার্ত থাকলে খাবারের আসল স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। তাই জ্ঞান পিপাসা বা জানার প্রবল ইচ্ছা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। তা ছাড়া আপনার পড়ার রুমটা বিভিন্ন জ্ঞানমূলক উক্তি দিয়ে সাজাতে পারেন। এতে পড়ার প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে।
স্টাডি প্ল্যান : একটি উত্তম পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক। তাই আপনি কী পড়বেন, কখন পড়বেন, কীভাবে পড়বেন, কতক্ষণ বা কতদিন পড়বেন এ বিষয়গুলো আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া পরিকল্পনার অংশ। তা ছাড়া আপনি কী জানতে চান, কেন জানতে চান, এটা জেনে কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন- এ বিষয়গুলোর ওপরও একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।
অনুকূল পরিবেশ : পড়ার জন্য চাই অনুকূল পরিবেশ। আপনার পড়ার অনেক ইচ্ছা আছে, কিন্তু আপনার বাসাভর্তি মেহমান, তাহলে আপনার পড়ার অনুকূল পরিবেশ আর থাকল না। তাই আপনার প্রয়োজন নীরব-নিভৃত পরিবেশ।
*মার্কিং করা : পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু শব্দ বা লাইন মার্ক করতে হবে। প্রয়োজনে পেন্সিল বা হাইলাইটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে একাধিকবার পড়ার সময় শুধু হাইলাইট বা মার্ক করা শব্দে বা লাইনে চোখ বুলালেই হবে। এভাবে সময়ও বাঁচবে। এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অজানা শব্দের অর্থ বা ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া।
কি ওয়ার্ড নির্বাচন : যে কোনো টপিকের কয়েকটি কি ওয়ার্ড থাকে- যেগুলো দিয়ে পুরো টপিকটা মনে রাখা যায়। তাই পড়া মনে রাখার আরও একটি কৌশল হলো কি ওয়ার্ড নির্বাচন করা।
ফ্লো-চার্ট ব্যবহার : প্রতিটি প্যাসেজ বা টপিকেরই ধারাবাহিকতা থাকে। অর্থাৎ, ধারাবাহিক তথ্য বিদ্যমান থাকে। আর এ ধারাবাহিক কিছু ছোট ছোট তথ্য দিয়ে সাজাতে পারেন একটি ফ্লো-চার্ট। যেমন : আপনি করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো প্যাসেজ বা টপিক পড়ছেন। এক্ষেত্রে ফ্লো-চার্টটি এমন হতে পারে : করোনাভাইরাস কী ➡ ভাইরাসের উৎপত্তি ➡ সংক্রমণের মাধ্যম ➡ প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি।
* ভিজুয়ালাইজেশন : আমরা যখন কোনো নাটক বা সিনেমা দেখি তখন সেই নাটক বা সিনেমাটা সহজেই মনে রাখতে পারি। তার কারণ, ভিজুয়ালাইজেশন। আপনি যে টপিকটি পড়ছেন- তা যদি ভিজুয়ালাইজড করা যায় অর্থাৎ, ভিডিও, ছবি, গ্রাফ বা চার্ট আকারে উপস্থাপন করা যায়- তাহলে পড়া বা তথ্য মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হবে। কারণ ভিজুয়ালাইজেশনে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো বেশি সজাগ থাকে।
প্রশ্ন অনুশীলন : একটা টপিক পড়ার পর সেই টপিক রিলেটেড কিছু প্রশ্ন তৈরি করা বা তৈরিকৃত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা। যেমন : কী, কেন, কীভাবে, কখন, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবে টপিকের গভীরে যাওয়া যায়। এতে দীর্ঘক্ষণ পড়া মনে থাকে।
উদাহরণ সৃষ্টি : আপনি যে টপিকটি পড়ছেন- তার সঙ্গে মিল রেখে বাস্তব কিছু ঘটনা বা উদাহরণ যদি খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে পড়া বা তথ্য মনে রাখাটা আরও বেশি সহজ হবে।
বিরতি : পড়ার সময় ছোট ছোট (প্রতিবার ২০-৩০ মিনিট পড়ার পর পাঁচ-সাত মিনিট) বিরতি দিয়ে পড়লে বেশিক্ষণ পড়া যায়। তাতে পড়ার প্রতি একঘেয়েমি ভাব দূর হয় এবং মস্তিষ্কে চাপ কম পড়ে। কারণ একটানা পড়লে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পড়ার পর মস্তিষ্ক আর লোড নিতে পারে না। ফলে পড়ার প্রতি আর আগ্রহ থাকে না। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
শুয়ে শুয়ে মনে করা : সারা দিন যা পড়লেন তা ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে মনে করার চেষ্টা করাটাও পড়া মনে রাখার একটা ভালো কৌশল।
আরো পড়ুন: অভিনয় জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছি না : সব্যসাচী
রিভিশন করা : আমরা ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত অনেক কিছুই পড়েছি, কিন্তু সবই কি আমাদের মনে আছে? উত্তর- না। এর কারণ আমরা রিভিশন দেই না। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে- আমরা যখন পড়ি, তার এক ঘণ্টা পর ৪৪ শতাংশ পড়া আমাদের মনে থাকে। একদিন পর ৩০ শতাংশ মনে থাকে। আর এক সপ্তাহ পর মাত্র ২০ শতাংশ মনে থাকে।
তার মানে, এক সপ্তাহ পর ৮০ শতাংশই ভুলে যাই। তাই রিভিশনের মাধ্যমে পড়া মনে রাখাটা একটা বড় কৌশল। কারণ আমরা যখন পড়ি, তখন তা আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে জমা হয়। যা কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পরে ভুলে যাই। কিন্তু যদি আমরা বারবার রিভিশন দেই, তাহলে তা শর্ট-টার্ম মেমোরি থেকে লং-টার্ম মেমোরিতে স্থানান্তরিত হয়।
এতে অনেক দিন পড়া বা তথ্য মনে থাকে। রিভিশন দেওয়া মানে পুরো টপিকটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া না, রিভিশন দেওয়া মানে পূর্বে হাইলাইট করা বা মার্ক করা শব্দে বা লাইনে চোখ বুলানো। তাই পড়া মনে রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিভিশন।
এসি/আইকেজে
খবরটি শেয়ার করুন