বুধবার, ৩রা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফ্যাশন যেভাবে আবদুল হামিদকে ভোট পেতে সাহায্য করেছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:০৪ অপরাহ্ন, ২৫শে এপ্রিল ২০২৩

#

১৯৬২ সাল, তখন আবদুল হামিদ গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ।। ছবি: আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি বই থেকে নেওয়া

‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ নামে স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। যেখানে তাঁর বাল্যকাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়ের বর্ণনা আছে। এই স্মৃতিকথায় উল্লেখ করা কয়েকটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি বেশ ফ্যাশনসচেতন ছিলেন। তাঁর সেই সময়ের কিছু ছবিতেও বিষয়টি স্পষ্ট। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বই থেকেই জেনে নেওয়া যাক সেই সময়ের কিছু তথ্য।

‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ বইতে ছেলেবেলার কথা বেশ প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। স্কুলজীবন প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় থেকে সব সময় কেতাদুরস্ত ছিলাম, শরীরের সঙ্গে মানানসই শার্ট–প্যান্ট পরতাম। এতে মাঝে মাঝে ছাত্র, অভিভাবক এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকেও মৃদু আপত্তি আসত। তবে আমার এই পোশাক নির্বাচন যে আমাকে বিশেষ অবস্থানে দাঁড় করায়, তা সহজে অনুমান করতে পারি।’

সদ্য সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বেশ রসিক মানুষ। তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় যেমন তাঁর রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি এই বইয়ের কিছু কিছু অংশও নিশ্চয়ই পাঠককে নির্মল আনন্দ দেবে।

কেতাদুরস্ত পোশাক কীভাবে তাঁকে ভোট পেতে সাহায্য করল, সে প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘এমনকি ভোট প্রার্থনার ক্ষেত্রেও আমার বেশভূষা একটা বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। এদিক থেকে আমি বড়ই ভাগ্যবান। একবার মনে আছে, ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের সময় আমি এমএনএ পদে নির্বাচন করছি। ২৫ বৎসর বয়স। ৪ থানা মিলে বিরাট নির্বাচনী এলাকা। ঘুরতে ঘুরতে জান পেরেশান। নির্বাচনের দিন লঞ্চে করে ইটনা থেকে ফিরছি কেন্দ্র পরিদর্শন করতে করতে। পথে চারিগ্রাম এলাকা। নদীর পাড়েই একটি ভোটকেন্দ্র। এ গ্রামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিল। ধরেই নিয়েছি এই কেন্দ্রে কোনো ভোট পাবো না। দুনোমনো করে লঞ্চ ভিড়ালাম। তখন বিকেল। আমার গায়ে রঙিন টি–শার্ট, পরনে সাদা প্যান্ট, চোখে গগলস। পায়ে কাপড়ের জুতা। হাতে ক্যাপস্টান সিগারেটের প্যাকেট। লঞ্চ থেকে নেমে এলাম। ভোটকেন্দ্রে দেখি ৫০–৬০ জন মহিলা ভিড় করে আছে। আমি নায়কের ঢংয়ে হেঁটে কেন্দ্রের ভেতরে যাচ্ছি। এর মধ্যে চোখে পড়ল এক আধুনিকাকে। হাতে ক্যাপস্টান সিগারেটের প্যাকেট। থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। মেয়েদের মধ্যে একটা “গুইট্টাচালি” পড়ে গেল। একজন বলে উঠল, “প্রার্থী পোলা তো বেশ স্মার্ট আছে গো!” তখন অন্যান্য মেয়ে নতুন করে চোখ বড় করে আমাকে দেখল।’

আবদুল হামিদ আরও লিখেছেন, ‘ভোটের রেজাল্টের সময় দেখলাম ৭০–৮০টা ভোট পেয়েছি এই কেন্দ্রে। অনুমান করলাম এই প্রাপ্তির পাওনাদার আমার পরিধেয় বস্ত্র। প্রথমবার সাধারণ পোশাক পরায় অবহেলা পেয়ে পরেরবার ভালো কাপড়চোপড় পরে দাওয়াত খেতে গিয়ে শেখ সাদি কীভাবে দামি খাবারগুলো আস্তিনের ভেতর পুরে দিয়েছিলেন, সেই ঘটনাটা মনে পড়ে গেল।’

‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ অধ্যায়ে তাঁর পোশাক–পরিচ্ছদের আরেকটু বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে ‘ট্রেইটর’ অর্থাৎ দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিত করেন। ততক্ষণে অবশ্য আবদুল হামিদ ঢাকায় চলে এসেছেন। আর সংসদ অধিবেশনে যোগদান করবেন বলে কিছু কেনাকাটাও করেছেন। সে প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘আমি দ্রুত এমএনএ হোস্টেলে এসে কাপড়চোপড়গুলো আলমারিতে তালাবদ্ধ করে ব্যাগ হাতে নিয়ে হোস্টেল থেকে বের হয়ে পড়লাম। উল্লেখ্য, আমি ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অংশ নেবার প্রস্তুতি হিসেবে ২ সেট স্যুট, ৬টা শার্ট, ৬টা টাই, ২টা প্যান্ট, ১টা স্যুটকেস ও ১টা ব্যাগ কিনেছিলাম। এতে করে আমার প্রায় ৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল।’

প্রাথমিকের পাট চুকিয়ে কিশোর আবদুল হামিদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন ভৈরব কেবি হাইস্কুলে। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে একটা মারামারিতে জড়ানোয় স্কুল থেকে টিসি দেওয়া হয় তাঁকে। ভৈরব স্কুল থেকে নিকলী জিসি হাইস্কুলের ভর্তি হন হামিদ। এখান থেকেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন তিনি। এই স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে নেচেছিলেন স্কুলছাত্র হামিদ। তাঁর বর্ণনায়, ‘নৃত্যশিল্পীদের একক ও যৌথ পরিবেশনা চলছে। এরই মধ্যে আমি বায়না ধরলাম আমি একটি ‘টুইস্ট’ নৃত্য পরিবেশন করব। আমার আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ রাখার মতো পরিস্থিতি তখন নিকলী স্কুলে ছিল না। কেননা আমি ছিলাম নিকলী স্কুলের ছাত্রদের তখনকার অঘোষিত অথচ সর্বজনস্বীকৃত মুখপাত্র। একটি সুন্দর পাঞ্জাবি, চোস পায়জামা, সুচালো মাথার সিরাজউদ্দৌলা শু পরে উঠে গেলাম মঞ্চে।’

কলেজে ভর্তি হয়েও ছাত্রদের মধ্যে পরিচিতি গড়ে তুলতে আবদুল হামিদকে সাহায্য করেছিল তাঁর পোশাক ও স্টাইল। তিনি লিখেছেন, ‘ভাবছি পাঁচ–ছয় হাজার ছাত্রের মধ্যে পরিচিতির ভুবন কী করে গড়ে তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে আমার একটা বাড়তি সুবিধা ছিল। আমার কেতাদুরস্ত পোশাক, ফর্সা গায়ের রং, নজরুল ধাঁচের মাথার চুল, দামি পাদুকা, দামি সিগারেটের প্যাকেট প্রভৃতি মিলিয়ে একটা নজরকাড়া অবস্থা।’

এমএইচডি/ আই. কে. জে/

আরো পড়ুন:

আজ থেকে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারব: আবদুল হামিদ

ফ্যাশন আবদুল হামিদ ভোট রাষ্ট্রপতি

খবরটি শেয়ার করুন