শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে বিবাহিতদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কম : গবেষণা

স্বাস্থ্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:০৩ অপরাহ্ন, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

মানবদেহের অনেক অসুখের মধ্যে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মস্তিষ্কের এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি স্মৃতিভ্রষ্ট হন কিংবা যেকোনো কিছু ভুলে যান। বাংলাদেশে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিতদের তুলনায় অবিবাহিতরা ডিমেনশিয়ায় বেশি আক্রান্ত হন।

ডিমেনশিয়া কী?

আমাদের মস্তিষ্ক আমরা যা চিন্তা, অনুভব করি, বলি ও করি তার প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি আমাদের স্মৃতিগুলোও সংরক্ষণ করে থাকে। কিছু কিছু রোগ আছে যা আমাদের মস্তিষ্ককে ঠিকমত কাজ করা থেকে বিরত রাখে। যখন কারো এরকম রোগ হয়ে থাকে, তাদের কোন কিছু মনে রাখা, চিন্তা করা ও সঠিক কথা বলা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। তারা এমন কিছু বলতে বা করতে পারে যা অন্যদের কাছে অদ্ভূত মনে হতে পারে, এবং তাদের জন্য দৈনন্দিন কাজ করা কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। পূর্বে তারা যেমন ছিল তেমন তারা নাও থাকতে পারে।

এসব বিভিন্ন সমস্যা বর্ণনা করতে চিকিৎসকেরা ডিমেনশিয়া শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। ডিমেনশিয়া আছে এমন অধিকাংশেরই আলঝেইমারস ডিজিজ বা ভ্যাসকিউলারডিমেনশিয়া থাকে, তবে এর অন্যান্য ধরনও রয়েছে।

আরো পড়ুন: তেলাপিয়া মাছ কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ!

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মালিহা হাকিম বলেছেন, ডিমেনশিয়া সাধারণত দু-ধরনের হয়। একটি নিরাময়যোগ্য এবং অন্যটি অনিরাময়যোগ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের ভালো রাখা সম্ভব। তবে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের ওষুধের চেয়ে পরিচর্যা বেশি জরুরি। সে জন্য সমাজ এবং পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে এবং সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পেলে এই রোগ কমিয়ে আনা সম্ভব।

বাংলাদেশে ডিমেনশিয়া নিয়ে ২০১৯ সালের আগে জাতীয় পর্যায়ে কোনো গবেষণা হয়নি। তবে ২০১৯ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ উদ্যোগে একটি গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। এরই মধ্যে সেই গবেষণাকর্ম ব্রিটিশ জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের শহর ও গ্রাম এলাকায় দুই হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, 

যারা একাকী জীবনযাপন করেন কিংবা জীবনসঙ্গী নেই, তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। বিবাহিতদের মধ্যে ৪.৯ শতাংশ আক্রান্তের ঝুঁকি থাকলেও অবিবাহিতদের মধ্যে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৪ শতাংশে। যেখানে অবিবাহিত পুরুষের (৬.৫ শতাংশ) থেকে অবিবাহিত নারীদের (১৩.৫ শতাংশ) ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেশি।

এ ছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষিত মানুষের তুলনায় অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। যারা কখনও স্কুলে যাননি এমন মানুষের আক্রান্তের হার ১০ শতাংশ। অথচ যারা ন্যূনতম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন, তাদের মধ্যে এই হার ৪.৫ শতাংশ। আর যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছেন কিংবা আরও বেশি শিক্ষিত তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়া রোগীর হার মাত্র ২.১ শতাংশ।

২০২০ সালে বাংলাদেশে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখের ওপরে। ২০৪১ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২৪ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডিমেনশিয়ায় সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মানুষ বেশি আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে ষাটোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে এই রোগের হার ৮.১ শতাংশ। বাংলাদেশে ডিমেনশিয়ার কারণে বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হচ্ছে। যেখানে রোগীপ্রতি বছরে খরচ হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। আর এই খরচের বেশির ভাগই হয় রোগীদের পরিচর্যার জন্য। 

বাংলাদেশে উত্তরের জেলাগুলোতে ডিমেনশিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। রাজশাহী বিভাগে এই রোগে আক্রান্তের হার ১৪.৯ শতাংশ। রংপুরে সেটি ১১.৯ শতাংশ। খুলনায় ৭.৮ শতাংশ, বরিশালে ৭.৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৬.৭ শতাংশ, সিলেটে ৪.৫ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগে ২.৯ শতাংশ ডিমেনশিয়া রোগী পাওয়া গেছে। 

বর্তমানে সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশে এই হার ৬০ শতাংশের বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ কোটির বেশি এবং ২০৫০ সালে সেই সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ১৯৯০ সালে সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়ার কারণে মারা গেছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। আর ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ লাখে। 

এসকে/  

ডিমেনশিয়া বিবাহিত ঝুঁকি কম

খবরটি শেয়ার করুন