যুক্তরাষ্ট্রের পর বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাসের ওপর এবার চীনের নজর পড়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ঘিরে মার্কিন তৎপরতার মধ্যেই বিশ্ববাণিজ্যে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটি খনিজসম্পদ অনুসন্ধান কাজে অংশীদার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বিষয়ে শিগগির চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে একটি আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট) পাঠানো হবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে পেট্রোবাংলায় এ বিষয়ে একটি উপস্থাপনা (প্রেজেন্টেশন) দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। ফলে যে কোনো দেশই এতে অংশ নিতে পারে।
তবে একই বিভাগের দুজন কর্মকর্তা জানান, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন একটি কোম্পানি প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাবের পর ভূ-রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগর। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের নামে কার্যত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে একক প্রভাব প্রতিষ্ঠাতা করতে চায়। এ অবস্থায় বিনিয়োগ প্রস্তাবসহ চীনের কোম্পানি বঙ্গোপসাগরে আগ্রহী হলে, তাতে অনুসন্ধান কার্যক্রম ও ভূ-রাজনীতিতে ভারসাম্য আসবে।
এদিকে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে গত বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন ও বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের এই বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘ চার বছর পর তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হলো।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত অনুসন্ধানে আগামী মাসে চীন বাংলাদেশকে আগ্রহপত্র পাঠাবে। এতে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ছাড়াও সাগরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিও থাকবে। আগ্রহপত্র পাঠানোর পর চীনা দূতাবাস থেকে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বিস্তারিত পরিকল্পনার একটি উপস্থাপনা (প্রেজেন্টশন) পেট্রোবাংলার কাছে পেশ করা হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই দরপত্রের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কোনো একক প্রস্তাব থাকলে, কোনো বিকল্প না থাকলে, প্রস্তাব খারাপ হলেও তখন ছাড় দিতে হয়। একাধিক প্রস্তাব থাকলে ভালো। তখন প্রতিযোগিতামূলক হয়।’
আই.কে.জে/