সোমবার, ১লা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিলাসবহুল ঘড়ির চাহিদা কমবে, এমন কোনো লক্ষণ নেই

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, ১৮ই এপ্রিল ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বে তরুণদের মধ্যে বিলাসবহুল ঘড়ির চাহিদা বেড়েছে। আর এ ধরনের ঘড়ির সরবরাহও কম। ফলে বিলাসবহুল ঘড়ির বাজার ধস এড়ানোর মতো অবস্থায় আছে বলে মনে করেন ফ্রান্সের বিলাসবহুল হাতঘড়ি ওডুমা পিগের প্রধান নির্বাহী ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াস। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসির এক সংবাদে তাঁকে উদ্ধৃত করে এ কথা বলা হয়েছে।

গত বছর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই মন্দাভাব ছিল। মূল্যস্ফীতি ছিল আকাশছোঁয়া। এ কারণে খুচরা বাজারে বিলাসবহুল হাতঘড়ির দাম ৮ শতাংশ পড়ে যায়। ওয়াচ চার্টের সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনবিসি বলছে, বেশ কয়টি শীর্ষ মডেলের ঘড়ির দাম এ সময় তাদের চূড়ান্ত মূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, মহামারির সময় যেসব পণ্য বা সেবা ফুলেফেঁপে উঠেছিল—যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি, এনএফটি—সেগুলো চুপসে যেতে পারে। ধসে যেতে পারে বিলাসবহুল ঘড়ির বাজারও। কিন্তু গত দুই মাসে বিলাসবহুল ঘড়ির দাম স্থিতিশীল হয়েছে। বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী চাহিদার কারণেই এসব ঘড়ির দাম স্থিতিশীল হয়েছে।

ওডুমা পিগের প্রধান নির্বাহী ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াস সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না ঘড়ির দাম খুব একটা কমবে।’ বিশ্বের শীর্ষ তিনটি ঘড়ির ব্র্যান্ডের একটি হচ্ছে ওডুমা পিগে। বাকি দুটি হচ্ছে রোলেক্স ও পাটেক ফিলিপ।

ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াস আরও বলেন, মানুষ এখনো নিজেকে পুরস্কৃত করতে চায়, সে জন্য মানুষ সবচেয়ে নামীদামি কোম্পানিরই দ্বারস্থ হয়; তা সে ঘড়ির জন্য হোক বা গয়না ও ফ্যাশনের জন্য।

ওডুমা পিগের প্রধান নির্বাহী বলেন, ঘড়ির বাজারে একধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন হচ্ছে। সেটা হলো, তরুণেরা এখন ঘড়ির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মিলেনিয়াল প্রজন্ম, অর্থাৎ যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এবং তাদের পরবর্তী জেন জি প্রজন্মের মানুষেরা এখন ঘড়ির বড় সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছেন। এতে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব আছে বলেই মনে করছেন ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াস।

ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াসের মতে, এসবের কল্যাণে এখন ক্রীড়া তারকা বা সেলিব্রিটিদের যাপিত জীবনের নাগাল পাচ্ছে মানুষ। তাঁরা কী ব্যবহার করেন, সে বিষয়ে বাড়ছে আগ্রহ। তারই ফল হচ্ছে উল্লিখিত দুই প্রজন্মের মানুষের মধ্যে ঘড়ির আগ্রহ বৃদ্ধি।

অন্যদিকে, ঘড়ির শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো উৎপাদনও কিছুটা কমিয়েছে। সে কারণে চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না জোগান। দাম আরও না কমার এটাই অন্যতম প্রধান কারণ।

ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াস মনে করেন, এখনকার এই ক্রেতারা হারিয়ে যাবেন না। এখন একজন গড়পড়তা ওডুমা ক্রেতার বয়স আগের চেয়ে অন্তত ১০ থেকে ১২ বছর কম, অন্তত সাম্প্রতিক ইতিহাসে তা-ই দেখা যায়। জীবনের বেশির ভাগ সময় যেখানে তাঁরা অনলাইন বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাটান, সেখান থেকে তাঁদের মধ্যে বিলাসবহুল ও শৈল্পিক ঘড়ির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।

অ্যাপল ২০১৪ সালে ডিজিটাল ঘড়ি বাজারে আনলে অনেকেই বলেছিলেন, নামীদামি ব্র্যান্ডের ঘড়ির দিন শেষ। ফ্রাঁসোয়া-অঁরি বেনাহমিয়াস বলেন, তখন অনেকেই বলেছিলেন, তরুণেরা আর ঘড়ি পরবেন না, পরলেও ডিজিটাল ঘড়ি। কিন্তু মানুষ তখন বুঝতে পারেনি, তরুণেরাও ঘড়ির ক্ষেত্রে বিশেষত্ব ও দক্ষতার কদর করবেন। ঠিক সে কারণেই তরুণেরা এখন শীর্ষ ব্র্যান্ডের ঘড়ির সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

ব্র্যান্ডের প্রতি আকর্ষণ-

নিপুণ শিল্পকর্মের প্রতি যেমন মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন, তেমনি সমাজের উচ্চবিত্তের মধ্যে ব্র্যান্ড ভ্যালুর কদরও আছে। তা আছে বলেই মানুষ লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে হাতঘড়ি পরে। জামা, জুতা, ব্যাগ—সব ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘দেখা গেছে কিছু কিছু অতি দামি ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম এত বেশি রাখা হয় বলেই ওই সব পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়, যা অর্থনীতির চাহিদাতত্ত্বের (দাম বাড়লে চাহিদা কমে) ঠিক উল্টো। সুইজারল্যান্ডের পাটেক ফিলিপ ব্র্যান্ডের সবচেয়ে কম দামের হাতঘড়ির দামও সাড়ে ১২ হাজার মার্কিন ডলার, কিন্তু সে তুলনায় ১০০ ডলারের একটি জাপানি সিটিজেন বা ক্যাসিও ব্র্যান্ডের ঘড়ি তেমন কোনো খারাপ সময় দেবে না।’

ওডুমা পিগের প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, সমাজের বিত্তবানদের নিজেদের আলাদা শ্রেণি হিসেবে জাহির করার প্রবণতা থেকেই এ ধরনের অতি দামি ব্র্যান্ডের পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়। একই কারণে লুইস ভুইটন ব্র্যান্ডের নারীদের হাতব্যাগের দাম প্রায় ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে; আর তার চেয়েও নামীদামি হারমেস হাতব্যাগের দাম ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের বেশি হতে পারে; যদিও অনেক কম দামের একটি সাধারণ ব্যাগের তুলনায় তাদের গুণগত মানে এমন কোনো বেশি পার্থক্য আছে বলা যায় না।

এমএইচডি/

আরো পড়ুন:

বছরের প্রথম প্রান্তিকে গাড়ি বিক্রি কমেছে ৩১ শতাংশ

বিশ্ববাণিজ্য অর্থনীতি বাণিজ্য বিলাসবহুল ঘড়ি

খবরটি শেয়ার করুন