সোমবার, ২০শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** জামায়াত বলে এক, করে আরেক: রুমিন ফারহানা *** বিনা দোষে ৪৩ বছর জেল খাটা ব্যক্তিকে কী এবার ভারতে ফেরত পাঠাবে আমেরিকা *** শিল্প-সাহিত্যকে নোংরা রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে: বেবী নাজনীন *** নির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক শুরু *** পর্নোগ্রাফিতে জড়িত বাংলাদেশি সেই যুগল গ্রেপ্তার *** ‘কালো বিড়াল’ দত্তক নেওয়া যে কারণে নিষিদ্ধ করল স্পেন *** ‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে স্ত্রী ভরণপোষণ চাইতে পারবেন না’ *** পাকিস্তান দেখাল কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘ডিল’ করতে হয় *** দেশে লাগাতার অগ্নিকাণ্ডে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে সরকারের কোর কমিটি *** নাহিদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বলল জামায়াত

বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার ডাক্তার এ যুগের ‘হাতেম তায়’

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৫২ অপরাহ্ন, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৩

#

ছবি-ফাইল

দানবীর হাতেম তায়ের নাম ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের সুবাদে আমাদের সকলের জানা। তিনি রূপকথার চরিত্র নন বরং সত্যিকারের রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন। তার পরোপকার আর মহৎ হৃদয়ের গল্প এতটাই অবিশ্বাস্য যে তিনি ইতিহাসের তাম্রলিপিতে স্থান পেয়ে গেছেন।

এই আধুনিক যুগেও এমনি এক হাতেম তায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে শেরপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। প্রায় ৩০ বছর যাবত নিরবে-নিভৃতে এ পেশা থেকে আয় করা সিংহভাগ নগদ অর্থ তিনি এলাকার শিশুদের জন্য ব্যয় করে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে তার সে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় লাখ টাকা।

শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের ডাকরা পাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পল্লী চিকিৎসক হাবিবুর রহমান ওরফে জব্বার ডাক্তার প্রায় ত্রিশ বছর ধরে প্রতিদিন এভাবেই ছুটে চলেন গ্রামীণ রাস্তা ও গ্রামের বিভিন্ন পাড়ার বাড়ি বাড়ি। সাথে নেন একটি শপিং ব্যাগ। সে ব্যাগে থাকে দশ ও বিশ টাকা নোটের নগদ ৩ হাজার টাকা এবং কিছু বিস্কুট ও চকোলেট।

বাসায় আগে থেকেই প্রতিদিনের জন্য ৩ হাজার টাকা খুচরো করে রাখেন তিনি। এরপর বেরিয়ে পড়েন দানের উদ্দেশ্যে। কোলের শিশুসহ স্কুলগামী শিশুদের মাঝে তিনি সেই টাকা এবং চকোলেট ও বিস্কুট বিলিয়ে দেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত গ্রাম ঘুরে বাড়ি ফিরেন দুপুর বেলা। 

এরপর দুপরের খাবার খেয়ে বিকেলে স্থানীয় ঝগড়ারচর বাজারে তার নিজস্ব ভবনের ফার্মেসিতে বসেন। প্রতিদিন তিনি পাড়া পাড়া ভাগ করে ঘুরেন। শেরপুর সদর উপজেলার কিছু অংশ, জামালপুরের বক্সীগঞ্জ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ এবং শ্রীবর্দী উপজেলার প্রায় ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম।

ভোগৌলিকগত কারণে উল্লেখিত উপজেলার গ্রামগুলো ডাকরাপাড়া গ্রামের কাছাকাছি।

তার ওই অর্থ ও খাদ্য বিতরণের সময় যদি কোনো শিশু বাড়িতে না থাকে তখন তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেন টাকা বিস্কুট-চকোলেট। তার এ দানের বিষয়ে খুশি শিশু এবং এলাকার সাধারণ মানুষ। কেউ তাকে দাদু আবার কেউ তাকে জ্যাঠা বলে সম্বোধন করে থাকেন।

জব্বার ডাক্তার একাত্তরে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম ফিলাপ করলেও যুদ্ধে যাওয়ার কারণে সে বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে কর্নেল তাহেরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে এসে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৪ সালে তার মা ও বাবা দুজনকে হারিয়ে ৯ ভাই-বোনের সংসারের চাপে পড়ে যান তিনি।

পরিবারের সবার বড় হওয়ার কারণে ৮ বোনকে বিয়ে দিতে গিয়ে তার আর নিজের সংসার করা হয়নি। ১৯৭৯ সালে তিনি পল্লী চিকিৎসকের পরীক্ষা দিয়ে শেরপুর জেলায় প্রথম হন।

এরপর ঝগড়ার চর বাজারে চেম্বার খুলে একটি ওষুধের ফার্মেসি দেন তিনি। শুরু করেন বিনামূল্যে রোগী দেখা। তবে শুধু ওষুধের দাম রাখেন তিনি। তার চিকিৎসায় রোগীরা ভালো হওয়ায় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম।

রোগীরাও খুশি তার চিকিৎসায় ও শিশুদের প্রতি ভালোবাসা দেখে। যে কোনো শিশু রোগী চিৎকার করলে তিনি তাকে কোলে নিয়েই শান্ত করে ফেলেন। 

পল্লী চিকিৎসকের লাইসেন্স থাকলেও তিনি এলোপ্যাথির পাশাপাশি হোমিও চিকিৎসাও করে থাকেন। কারণ তিনি পল্লী চিকিৎসকের পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ঝগরার চর বাজারে স্থানীয় এক ডক্তারের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি হোমিও চিকিৎসাতেও বেশ পারদর্শী বলে জানায় স্থানীয়রা।

জব্বার ডাক্তারের আত্মীয়রা তার এই মহতি কাজের জন্য বেশ প্রশংসা করেন এবং গর্ববোধ করেন। তারা জানান, তিনি শুধু মানুষকেই ভালোবাসে না, আশপাশের কুকুর-বেড়ালও তার খুব ভক্ত। তিনি যতক্ষণ বাড়িতে থাকেন ততক্ষণ তার চারপাশে ও বাড়ির উঠান ঘিরে থাকে অসংখ্য কুকুর-বেড়াল।

জব্বার ডক্তার এসব কুকুর-বেড়ালকে ভালোবেসে প্রতিদিন নিজ হাতে খাবার দেন। সে কারণে ঘরের ভেতর সব সময় বেড়াল এবং ঘরের বাইরে দরজার সামনে কুকুর বসে থাকে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ওরফে জব্বার ডাক্তার জানান, দেশ স্বাধীন করে আসার পর বাবা-মা জীবিত থাকায় কয়েক বছর ঘোরাফেরা করেই সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু ১৯৭৪ সালের পর বাবা ও মা মারা যাওয়ায় তার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। কী করবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। তিনিসহ ৮ বোনের বিশাল সংসার। 

আরো পড়ুন: পাকস্থলিতে ইয়াবা, বিমানবন্দরে রোহিঙ্গা পরিবার আটক

সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। দাদার বিশাল সহায় সম্বল থাকলেও বাপ-চাচাদের জন্য কিছুই রেখে যাননি। সব জমিজমা বর্গাদার আর ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে যান। ফলে পৈত্রিক সম্পদ পান মাত্র ১৩ শতকের ভিটে বাড়িটি। 

এরপর পল্লী চিকিৎকের পেশায় থেকে জীবনের গতি কিছুটা সচল করেন। এর আগে তিনি নানান পেশায় জড়িত থাকলেও কোনো পেশাতেই সফল হতে পারেননি।

জব্বার ডক্তার জানান, তার পৈত্রিক মাত্র ১৩ শতক বাড়ি ভিটের জমিটি ৮ বোন তাদের ওয়ারিশ না নিয়ে ভাইয়ের নামে লিখে দেওয়ায় বোনেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্মায় তার।

এছাড়া শিশুদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এ অর্থ বিতরণ করে থাকেন বলে জানান তিনি। তিনি বাকি জীবন এভাবেই শিশুদের ভালোবেসে তার ব্যবসার সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করে যাবেন বলেও জানান জব্বার ডক্তার।

এসি/ আই. কে. জে/


জব্বার ডাক্তার ‘হাতেম তায়’

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250