সোমবার, ২০শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানাল বিএনপি, শহীদ মিনারে নেতারা *** আলতাফ শাহনেওয়াজের যৌন নিপীড়ন ইস্যুতে সম্পাদকের কাছে পাঁচ বিশিষ্ট নারীর চিঠি *** জামায়াত বলে এক, করে আরেক: রুমিন ফারহানা *** বিনা দোষে ৪৩ বছর জেল খাটা ব্যক্তিকে কী এবার ভারতে ফেরত পাঠাবে আমেরিকা *** শিল্প-সাহিত্যকে নোংরা রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে: বেবী নাজনীন *** নির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক শুরু *** পর্নোগ্রাফিতে জড়িত বাংলাদেশি সেই যুগল গ্রেপ্তার *** আবারও অস্কারে নারী নির্মাতার সিনেমা পাঠাল সৌদি আরব *** ‘কালো বিড়াল’ দত্তক নেওয়া যে কারণে নিষিদ্ধ করল স্পেন *** ‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে স্ত্রী ভরণপোষণ চাইতে পারবেন না’

‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে স্ত্রী ভরণপোষণ চাইতে পারবেন না’

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন, ২০শে অক্টোবর ২০২৫

#

প্রতীকী ছবি

আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী বা স্বনির্ভর হলে ভরণপোষণ বা অ্যালিমনি না দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন দিল্লির হাইকোর্ট। আদালত পর্যবেক্ষণ করে মন্তব্য করেছেন, স্থায়ী ভরণপোষণ বা পার্মানেন্ট অ্যালিমনি মূলত সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি ব্যবস্থা। আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে আর্থিক সমতা আনার বা বিত্তশালী হওয়ার হাতিয়ার নয়।

ভারতের আইনি সংবাদ ওয়েবসাইট বার অ্যান্ড বেঞ্চ-এর প্রতিবেদনের বরাতে এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।

বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল এবং বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্কর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছেন, আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ দাবি করা ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি সত্যিই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার মতো অবস্থায় আছেন।

রায়ে আরও বলা হয়, ‘হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের ধারা ২৫ অনুযায়ী বিচারিক ক্ষমতা এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না যাতে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর আবেদনকারীকে অ্যালিমনি দেওয়া হয়। এই ক্ষমতা অবশ্যই সঠিকভাবে এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। উভয় পক্ষের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে এবং আবেদনকারীর প্রকৃত আর্থিক দুর্বলতার প্রমাণ না থাকলে তা দেওয়া যাবে না।’

একটি ভরণপোষণের দাবি খারিজ এবং বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিয়ে ফ্যামিলি কোর্টের আদেশ পুনর্বহাল রেখে এই পর্যবেক্ষণ জানান দিল্লির হাইকোর্ট।

স্বামী আইনজীবী এবং স্ত্রী ভারতীয় রেলওয়ে ট্রাফিক সার্ভিস কর্মকর্তা। গত ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে করেন তারা। এর আগে তাদের দুজনেরই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। এই বিয়ের মাত্র ১৪ মাসের মধ্যেই আলাদা হয়ে যান তারা।

স্বামী অভিযোগ করেন, স্ত্রী তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, অপমানজনক মেসেজ পাঠান, দাম্পত্য অধিকার অস্বীকার এবং পেশাগত ও সামাজিকভাবে অপদস্থ করেছেন। অন্যদিকে স্ত্রী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের পাল্টা অভিযোগ আনেন।

ফ্যামিলি কোর্ট তাদের রায়ে বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর করেন এবং উল্লেখ করেন যে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদে রাজি হওয়ার শর্ত হিসেবে ৫০ লাখ রুপি আর্থিক সমঝোতা দাবি করেছিলেন। এই দাবি তিনি নিজেই হলফনামা ও জেরা চলাকালীন স্বীকার করেছেন। দিল্লি হাইকোর্টও এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হন এবং বলেন এতে হস্তক্ষেপের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

বেঞ্চ বলেন, ‘ফ্যামিলি কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে ভিত্তিহীন বা অযৌক্তিক বলা যায় না। আপিলকারীর (স্ত্রীর) এই মনোভাবের একটি সুস্পষ্ট আর্থিক দিক ছিল। বরং আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে এটি ছিল একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।’

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্ত্রী তার স্বামী এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর ভাষা’ ব্যবহার করেছিলেন। এমনকি স্বামীকে ‘অবৈধ সন্তান’ বলে আখ্যা দেন, যা আদালতের মতে মানসিক নির্যাতনের শামিল।

শেষ পর্যন্ত আদালত স্থায়ী ভরণপোষণ বা পার্মানেন্ট অ্যালিমনি দেওয়ার আবেদন নাকচ করে দেয়। কারণ হিসেবে আদালত উল্লেখ করে, ওই নারী একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ভালো বেতন পান এবং আর্থিকভাবে সাবলম্বী।

আপিল খারিজ করে বেঞ্চ আরও বলেন, ‘তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল স্বল্পকালীন, সন্তান নেই, আপিলকারীর (স্ত্রীর) উল্লেখযোগ্য ও স্বাধীন আয় রয়েছে এবং আর্থিক সহায়তার প্রকৃত প্রয়োজনের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। এসব বিষয় বিবেচনা করলে স্থায়ী ভরণপোষণ পাওয়ার দাবি টেকে না। তাই আমরা ফ্যামিলি কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপের কোনো কারণ দেখি না এবং ভরণপোষণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হলো।’

ভারতে উচ্চমূল্যের ভরণপোষণ দাবি ক্রমেই বাড়ছে। আদালতগুলোও এসব দাবি কঠোরভাবে পর্যালোচনা করছে।

গত জুলাইয়ে মুম্বাইয়ে একটি বাড়ি, ১২ কোটি টাকা ভরণপোষণ এবং একটি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি চেয়ে এক নারী আদালতে আবেদন করেন। সে সময় তৎকালীন ভারতের প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই মন্তব্য করেন, ওই নারী ‘উচ্চশিক্ষিত’ এবং নিজের জীবিকা অর্জনের সক্ষমতা রাখেন।

তিনি বলেন, ‘আপ ইতনা পঢ়ি-লিখি হ্যায়। আপকো খুদকো মাংনা নেহি চাহিয়ে অউর খুদকো কামা কে খানা চাহিয়ে।’ অর্থাৎ ‘আপনি এতটা শিক্ষিত। আপনাকে কারও কাছ থেকে চাইতে হবে কেন, আপনি নিজেই তো উপার্জন করে চলতে পারেন।’

জে.এস/

হাইকোর্ট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250