ছবি: সংগৃহীত
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সবাইকে নিয়েই তাই চলতে হয় আমাদের। একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিই সুখ-দুঃখ। সমাজে থাকতে গেলে নানা কথা বলতে হয়। তবে কিছু কথা অন্যকে না বলাই ভালো। মনের অজান্তেই আমরা বডি শেমিং করে ফেলি। কিংবা কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে অনধিকার চর্চা করি। যা একদমই উচিত নয়।
এমন কিছু প্রশ্ন আছে যা কাউকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। কিংবা মনে আঘাত পান। এসব প্রশ্ন করাকে অভদ্রতার বহিঃপ্রকাশ মনে করা হয়। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত-
বিয়ে করছেন কবে?
সমাজের প্রচলিত রীতি বিয়ে। তবে এর কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। কেউ চাইলে ২৩ বছরে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারেন। আবার কারো ইচ্ছে হলে ৩৩ এও অবিবাহিত থাকতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত একটি বিষয়। তাই কাউকে ‘কবে বিয়ে করছেন?’— এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা একদম অনুচিত।
ছোট-বড় কাউকেই এই প্রশ্ন করবেন না। এমনকি কাছের বন্ধু হলেও না। এটি অভদ্রতা। কে কখন বিয়ে করবেন সেটি তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। পুরুষের তুলনায় নারীকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বেশি। এমনকি মা-বাবাকে শুনতে হয় মেয়েকে কবে বিয়ে দেবেন সেই প্রশ্ন।
বাচ্চা কবে নিচ্ছেন?
নবদম্পতি থেকে শুরু করে বিয়ের অনেকদিন পার করা দম্পতি—কেউ রেহাই পান না এই প্রশ্ন থেকে। ছোট-বড় সবাই মজার ছলেই জিজ্ঞেস করে ফেলেন, বাচ্চা নিচ্ছেন না কেন? মা-বাবা হবি কবে? সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্তটি স্বামী আর স্ত্রীর। তাদেরই ঠিক করতে দিন কবে সন্তান নেবেন। অন্যের সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনায় আপনার মাথাব্যথা হওয়ার কোনো মানেই হয় না।
হতে পারে তারা কোনো শারীরিক বা আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। হতে পারে তারা জীবনকে উপভোগ করতে চান। তাই উটকো প্রশ্ন করে তাদের মানসিক আঘাত করবেন না।
সংসার ভাঙল কেন?
কীরে সংসার টেকাতে পারলি না? কেন হলো ডিভোর্স?— কারও বিবাহবিচ্ছেদ হলেই এমন সব প্রশ্ন মুখের ওপর করে ফেলেন অনেকে। এতে সেই ব্যক্তি মানসিক আঘাত পেতে পারেন। কারও ডিভোর্স হওয়ার মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। দুটো মানুষ একসঙ্গে থাকতে চাননি বলেই হয়তো বিচ্ছেদ বেছে নিয়েছেন। কিংবা কোনো সঙ্গত কারণেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা চরম অভদ্রতা।
বেতন কত?
কারো চাকরির কথা শুনলেই অনেকে প্রশ্ন করে বসেন, বেতন কত? এই প্রশ্ন করা একদমই অনুচিত। পুরুষ হোক নারী— কারোর বেতন জিজ্ঞেস করবেন না। এটি অভদ্রতা।
এতদিন পড়াশুনো করে কী লাভ হলো?
অনেক মানুষই চাকরি করেন না। ছবি আঁকা, অনলাইন ব্যবসা বা লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তাদের অনেকেই বলে ফেলেন, এত পড়ে লাভ কী হলো? একটা চাকরি জোটাতে পারলি না? এসব প্রশ্ন করা অভদ্রতা। কে কী করবে তা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
সংসারে অশান্তি লাগানোর কথা
অনেক সময় ছেলে আলাদা থাকলে কেউ কেউ মা-বাবাকে সমবেদনা দেখাতে গিয়ে উটকো কথা বলে ফেলেন। এই যেমন- আপনি এখানে কষ্টে আছেন আর ছেলে বউকে নিয়ে শহরে বেশ মজায় আছে। এই ধরনের কথা বলবেন না। এসব কথা ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবারের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির কারণ হতে পারে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এমন কথা বলা অনুচিত।
আরো পড়ুন: দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো রাখতে সঙ্গীকে যে মিথ্যা বলা যাবে!
বডি শেমিং
আর কত মোটা হবি? কীরে দিন দিন তো শুকিয়ে যাচ্ছিস?— এমন প্রশ্ন আমরা প্রায়ই করি। কাউকে দেখে তার শারীরিক গঠন নিয়ে মন্তব্য করবেন না। হতেই পারে তিনি কোনো অসুখ বা মানসিক চাপে আক্রান্ত। এসব প্রশ্ন তাকে বিব্রত করতে পারে।
এছাড়াও কারো সঙ্গে কারোর তুলনা করা ঠিক নয়। ওমুক এত ভালো করলো, তুই কেন পারলি না? ওর তো চাকরি হলো, তোমার কেন হলো না?—এমন প্রশ্ন করাও অভদ্রতা। অন্যকে বিব্রত করবে এমন প্রশ্ন না করাই ভালো।
এসি/ আই.কে.জে/