সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজায় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এফবিসিসিআই

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রোজায় অসৎ ব্যবসায়ী ও অনৈতিকভাবে বাজারে সংকটকারীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাথে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এতে কাজ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে সহযোগিতা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

সোমবার (১৮ই ডিসেম্বর) এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নেতারা এ কথা জানান। রোজায় নিত্যপণ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার অজুহাতে খোলা তেল বাজার থেকে একেবারে উঠিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অথচ এই ব্যবসার সাথে অনেক মানুষ জড়িত। ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোতে তদারকি বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোজ্যতেল মিলমালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সিটি গ্রুপের পরামর্শক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, সরকার আমাদেরকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সব কোম্পানি এটা পারবে বলে মনে হয় না। খোলা তেলের ব্যাপারে যে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তা হলো- এই তেলে ভিটামিন ‘এ’ থাকে কি না। আমাদের কাছে মনে হয় খোলা তেলেও ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা সেভাবে চলব।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, রমজানের আগে মুরগির দাম একটু একটু বাড়ানো হচ্ছে। এলপিজি আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ রেস্তোরাঁ খাতে প্রচুর এলপিজির প্রয়োজন। বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করলে সভা করতে করতে লোপাট করা শেষ হয়ে যায়। কোনো আমলা দিয়ে নীতি নির্ধারণ যাবে না। ব্যবসায়ীরা নীতি নির্ধারণ করবে। তাহলে বাজারে কোনো সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, বুট ও অ্যাংকর ডালের দাম বাড়ছে। এ খাতের ছোট আমদানিকারকেরা এখন আর টিকে নেই। সব বড় আমদানিকারকদের হাতে। সুতরাং, এখনই এই বাজারে নজরদারি বাড়তে হবে।

তাজা ফল আমদানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রমজানে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ। তিউনিসিয়া-আলজেরিয়া থেকে হিমায়িত কন্টেইনারে খেজুর আনতে গেলে দুই মাস সময় লাগে। কিন্তু খেজুরের শুল্ক কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এমনও হয়েছে আমি গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে আসার পরে শুল্কায়ন আরো বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, বিভিন্ন বাজারের অনেক ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য নন। তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। তবে কাঁচাবাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে জোরালো দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নরুল কবির বলেন, গত এক মাস হলো লবণের উৎপাদন শুরু হয়েছে। আবহাওয়াজনিত কারণে উৎপাদনে একটু সমস্যা হলেও এক মাসের মতো লবণের মজুত আছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি হলে লবণের উৎপাদন ভালো হবে।

আরো পড়ুন: চিনির দাম আর বাড়বে না: বাণিজ্যমন্ত্রী

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন বলেন, মিলমালিকেরা সরবরাহ ঠিক রাখলে আসন্ন রমজানে বড় কোনো সংকট হবেনা। মিলমালিকেরা যেন কোনো সংকটের কথা বলে সরবরাহ কমিয়ে না দেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, যেসব পণ্য যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে তারা সরকারকে বোঝায় যে, উৎপাদনে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা করতে গিয়ে অনেকসময় ভুল তথ্য দেওয়া হয়। এজন্য আমরা ভোগ্যপণ্য নিয়ে একটা মন্ত্রণালয় চাই। একেকজন একেক দিকে না গিয়ে আমরা একটা জায়গায় কথা বলতে চাই। সমস্যার সমাধান চাই।

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, যারা অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করবে আমরা তাদের সঙ্গে নেই। ব্যবসায়ীদের কেউ অসাধু বলুক, সিন্ডিকেট করা হচ্ছে এমন কোনো কথা উঠুক, তা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। কোন সমস্যা হলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের কোনো বদনাম হোক তা চাই না।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছি। এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা আছে। এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। প্রয়োজনে আরও কথা বলব। মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে কথা উঠেছে। কিন্তু আমি মনে করি এটার আগে যেসব মন্ত্রণালয় বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের মধ্যে সমন্বয় হওয়াটা বেশি জরুরি।

সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, কাজ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে সহযোগিতা করবে এফবিসিসিআই।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের সভায় ব্যবসায়ীরা বেশ ইতিবাচক কথা বলেছেন। তাতে আমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল। ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক মানসিকতায় থাকলে বাজারে কোনো বড় সংকট হবে না বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ব্যবসায়ীদের নীতিনৈতিকতা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। তাহলে আমাদের আর অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না।

এসকে/ 

এফবিসিসিআই রোজা বাজার নিয়ন্ত্রণ

খবরটি শেয়ার করুন