সোমবার, ১লা জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীপুরে গভীর নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৯ অপরাহ্ন, ৮ই মে ২০২৩

#

ছবি: সুখবর ডটকম

মনজুরুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে: নিরাপদ ও সুপেয় পানির আশায় গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী (গিলারচালা) এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন। কিন্তু ওই নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি। শুরুর দিকে ঠান্ডা পানি বের হলেও গত তিন বছর যাবত পানি বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই গরম পানির রহস্য বা অজানা কারণ জানতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরেজমিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গভীর নলকূপ থেকে গরম পানি বের হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে আশপাশের বাসিন্দারা ওই বাড়িতে এসে পানি নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল জানান, ২৬০ ফুট গভীর নলকূপ দিয়ে গরম পানি বের হচ্ছে। তবে কেন এবং কী কারণে নলকূপ থেকে গরম পানি বের হচ্ছে, এর কারণ কেউ বলতে পারছে না।

একই এলাকার আরিফ হোসেন জানান, সাহাব উদ্দিনের নলকূপের পানি অনেকটা গরম পানির মতো। বাড়ির ভাড়াটিয়ারা পানি ব্যবহারের কয়েক ঘন্টা আগে পানি সংরক্ষণ করে পাত্রে রেখে দেন। পরে পানি ঠান্ডা হলে ওই পানি তারা ব্যবহার করেন। তবে সাবানের পানির মতো এই পানি অনেকটা পিচ্ছিল। এটার গন্ধটাও একটু অন্যরকম।

শাহাব উদ্দিনের ছেলে কাউসার জানান, প্রায় ১৫/১৬ বছর আগে বসত ঘরের সামনে তার বাবা গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। ওই নলকূপ থেকে নিয়মিত গরম পানি বের হতে থাকে। পরে সুপেয় ও নিরাপদ ঠান্ডা পানি উত্তোলনের আশায় মটর উঠিয়ে পাঁচ হাত দূরে বাড়ির পাশেই প্রায় ৮ বছর আগে আবার গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। তখন ওই নলকূপ থেকে ঠান্ডা পানি বের হলেও গত তিন বছর যাবত পানিতে গরম অনুভূত হচ্ছে। ঠান্ডা পানির বদলে গরম পানি বের হচ্ছে। তাৎক্ষণিক ওই নলকূপ থেকে বের হওয়া পানি কোনও কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

সাহাব উদ্দিনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোসাম্মৎ নাসিমা আক্তার মিমি জানান, তিনি গত পাঁচ বছর যাবত এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন। আগে পানি ভালো ছিল। গত তিন বছর যাবত গরম পানি বের হওয়ায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ পানি দিয়ে গোসল করা যায় না। পানি ব্যবহার করলে শরীর চুলকায়, মাথার চুল পড়ে যায়। হাত-মুখ ধুয়ে স্বস্তি পাওয়া যায় না। ফ্রিজে পানি সংরক্ষণ করে ঠান্ডা হলে তারপর ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া ফ্রিজের পানি দিয়ে গোসল করালেও ঠান্ডা লেগে যায়।

সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রথমে বসত ঘরের সামনে ২২০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি ব্যবহার করছিলেন। তার বছর দুই পরে নলকূপ দিয়ে পাশের কারখানার ডাইংয়ের কালো পানি বরে হতে থাকে। হঠাৎ করে পানির অস্বাভাবিক রং ধরা পড়ে এবং হালকা গরম পানি বের হতে থাকে। পরে এই নলকূপের ৫ হাত দূরত্বে ২৬০ ফুট গভীরতা করে আরেকটি নলকূপ স্থাপন করি। নতুন নলকূপ থেকে প্রথম কয়েকদিন ঠান্ডা পানি বের হয়েছিল। এই নলকূপে তিন বছর আগে থেকে গরম পানি আসা শুরু করে। বছর তিনেক যাবত নলকূপের পানি কুসুম কুসুম গরম। সংরক্ষণ করে ঠান্ডা হওয়ার পর এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। পানি গরম হওয়ায় আমার বাড়িতে ভাড়াটিয়া আসে না। যারা ভাড়া আছে তারাও বাসা খুঁজতেছে চলে যাওয়ার জন্য। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে নতুন করে নলকূপ বসানো হলেও পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

আরো পড়ুন: কাপাসিয়ায় কেরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ির পাশেই প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ডাইং প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে তাদের প্রকৌশলী এসে বিষয়টি দেখে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু দেখি দেখি বলে তিন বছর পার হলেও কোনো সামাধান দিচ্ছেন না।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, গরম পানি বের হওয়ার খবরে আমি নিজ উদ্যোগে ওই নলকূপের পানি সংগ্রাহ করে বেসরকারি কয়েকটি দপ্তরে পাঠিয়েছি। কেন গরম পানি বরে হচ্ছে তা পরীক্ষা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল খান জানান, গভীর নলকূপ থেকে গরম পানি বের হওয়ার বিষয়টি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধমে জানতে পেরেছেন। অফিস সময়ে তিনি বিষয়টি দেখবেন। তবে এখানে পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, আমরা আর্সেনিক পরীক্ষা করতে পারব। বাড়ির মালিক সাহাব উদ্দিনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটা ল্যাবে পরীক্ষা করতে হবে।

এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/

শ্রীপুর গভীর নলকূপ গরম পানি

খবরটি শেয়ার করুন