সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে চীনের নীরবতায় উদ্বিগ্ন বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৫৭ অপরাহ্ন, ১০ই জুন ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

গত এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে বৈঠকে চীনের অনুপস্থিতি বৈশ্বিক ঋণের সমস্যাগুলোর প্রতি চীনের মনোভাব নিয়ে ক্রমবর্ধমান হতাশার ইঙ্গিত প্রদান করে।

বৈঠকে শ্রীলঙ্কা চীনা প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানালেও চীন সে বৈঠকে অংশ নেয় নি। অর্থাৎ চীন ঋণ বিষয়ক কোন আলোচনা করতে রাজি নয়। তাছাড়া ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারেও চীনের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর।

ওয়াশিংটনের বৈঠকটি প্যারিস ক্লাব, জাপান এবং ভারতের সাথে পুনর্গঠন আলোচনার সূচনা করেছে। শ্রীলঙ্কার ঋণ আলোচনায় নতুন গতি প্রদানের জন্য আয়োজিত এ বৈঠকে কার্যকর পদ্ধতিতে সমস্ত সমস্যার সমাধানও করা হয় এবং সব পক্ষ সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে। বৈঠকটি সফলভাবেই শেষ হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা এবং এর ঋণদাতাদের মধ্যে চুক্তির ক্ষেত্রে একটি বিশাল বড় পদক্ষেপ ছিল এ বৈঠকটি।

আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেনজি ওকামুরা বলেন যে, শ্রীলঙ্কা চরম ঋণ সংকটে রয়েছে এবং এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত ঋণের সমাধান প্রয়োজন। সকল সরকারী দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা এ ব্যাপারে অংশ নিবেন এবং আলোচনা সুষ্ঠু ও দ্রুতগতিতে অগ্রসর হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। 

তিনি বিশ্বাস করেন যে সংকট মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল সমস্ত সরকারী ঋণদাতাদের একত্রিত হওয়া এবং সকলের সুবিধার্থে কাজ করা৷ এর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা তার ঋণ পরিশোধ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারে। তাছাড়া এতে ঋণদাতারাও উপকৃত হবেন। 

আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে ঋণের ব্যাপারে একটু নরম হতে রাজি হয় চীন। নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর ঋণমুক্তির জন্য বৃহত্তর দিকনির্দেশনা তৈরির লক্ষ্যে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

তবে চীনের এই নরম হয়ে থাকা কি আদৌ শ্রীলঙ্কা কিংবা জাম্বিয়ার মতো ঋণে ডুবে থাকা দেশগুলোর জন্য সুবিধার হবে কি না তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ দুই দেশ চীনকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছে। তাছাড়া ধীরগতির ঋণ নিষ্পত্তির কারণে এই দেশগুলো ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য দেশগুলো বৈঠকে চীনের উপস্থিতি চাইলেও ঋণের ব্যাপারে আলোচনা করতে নারাজ চীন।

শ্রীলঙ্কা, যে কোনও ক্ষেত্রেই, চীনের সাথে একটি পৃথক ঋণ চুক্তিতে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নয়। এতে করে অন্যান্য ঋণদাতারাও একই পদ্ধতি অবলম্বন করবে যার ফলে ঋণের সমস্যা সমাধানে আরও বিলম্ব হতে পারে।

জাপানের অর্থমন্ত্রী শুনিচি সুজুকি জানান, চীনকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আলোচনায় অংশ নেয় নি।

ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসও এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে নারাজ। চীন সরকারও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। এদিকে চীন সরকারের আলোচনায় না আসার সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে জাপান। জাপান চীনকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে এবং আলোচনায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইতিমধ্যে, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি চীন এবং তার অন্যান্য ঋণদাতাদের দ্রুত ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে আরেকটু ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। 

শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারী এবং আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। তাছাড়া গোতাবায়া রাজাপাকসের শাসনকালে এ সংকট আরও বৃহৎ আকার ধারণ করে। নির্বাচনের পরপরই তিনি বড় বড় কোম্পানিগুলোকে কর সুবিধা প্রদান করেন, ফলে সরকারি কোষাগারে সরকার অনেক রাজস্ব হারায়।

শ্রীলঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ডঃ নন্দলাল ওয়েরাসিংহে পুনর্গঠন আলোচনার দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। পুনর্গঠন ছাড়া, দেশটি তার ঋণের দায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাবে এবং এর ফলে আরও অর্থনৈতিক অসুবিধা হতে পারে। এটি দেশের ক্রেডিট রেটিং এবং ঋণের স্থায়িত্বের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

অন্যদিকে ঋণ পুনর্গঠন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগের সুযোগও করে দিবে।

আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, জাপানসহ প্যারিস ক্লাব মেম্বাদের থেকে শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার, চীনের থেকে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার এবং ভারতের কাছ থেকে ১৮ কোটি মার্কিন ডলার। 

২০ মার্চ, আইএমএফ শ্রীলঙ্কার জন্য ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, চার বছরের বেলআউট অনুমোদন করেছে এবং ঋণ-পুনর্গঠন আলোচনার দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। চীন ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কার কিছু ঋণ পরিশোধের সময় নির্ধারণ করেছে এবং ঋণের জন্য ইক্যুইটি অদলবদলের প্রস্তাব দিয়েছে।

এভাবেই চীন তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করে ছোট দেশগুলোর সম্পদ অর্জনের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। চীন অন্যান্য দেশগুলোর মতো ঋণ পুনর্গঠন আলোচনায় যোগ দিলে তা শ্রীলঙ্কার জন্য অধিক সুবিধাজনক হতো।

শ্রীলঙ্কা তার ঋণ পুনর্গঠনের জন্য চীনের সাথে একটি চুক্তি সুরক্ষিত করার আশা করছে, যা বেলআউটের বোঝা কমাতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কা এখনো চুক্তির ব্যাপারে কোনকিছু চূড়ান্ত করতে পারেনি। দেশটি তার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বর্তমানে আইএমএফ বেলআউটের উপর নির্ভরশীল।

স্বচ্ছতার অভাব এবং দরিদ্র দেশগুলোকে অতিরিক্ত ঋণ প্রদানের জন্য এর আগেও বহুবার সমালোচিত হয়েছে চীন। আর্জেন্টিনা এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলো তাদের অস্থিতিশীল ঋণের মাত্রার কারণে ইতিমধ্যে আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে।

আরো পড়ুন: 'অখণ্ড ভারতে'র পাল্টায় 'অখণ্ড নেপালে'র মানচিত্র টানালেন কাঠমান্ডুর মেয়র

ফেব্রুয়ারিতে, প্যারিস ক্লাবের ঋণদাতারা,এবং একইসাথে হাঙ্গেরি ও সৌদি আরব, চীনকে শ্রীলঙ্কার ঋণ মুক্ত করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যোগদানের আহ্বান জানায়। তবুও চীন সে আলোচনায় যুক্ত হতে চায় নি।

এম এইচ ডি/

শ্রীলঙ্কা ঋণ চীন বিশ্ব

খবরটি শেয়ার করুন