ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক মাস যাবত বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং খাদ্য ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক সংকট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে দেশের মুদ্রাস্ফীতি আরও ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের অবস্থা এতোটা ভয়াবহ যে কম টাকায় সামান্য আটা কেনার জন্য অনেকেই একে অপরের সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা লাভে বিলম্বের কারণে দেশের অবস্থা আরো শোচনীয়।
কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যাই এ দেশের একমাত্র সমস্যা নয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও এ দেশের এক বিরাট বড় সমস্যা। পাকিস্তান রাজ্যের অধীনে রয়েছে নির্বাচিত সরকার, সামরিক স্থাপনা এবং ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)। তবে সন্ত্রাসবাদী এবং জিহাদি সংগঠনগুলোও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন দেশের অবস্থা শোচনীয় হবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই।
পূর্ববর্তী সরকার রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের শিকার হয় এবং শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে বিরোধীদের দ্বারা গঠিত নতুন এক সরকার দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে এই নতুন সরকারের কোন ধরনের কার্যক্রম বা অগ্রগতি নেই বললেই চলে। পাকিস্তানে এর আগেও প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে রাজনীতিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগেও অনেক নেতাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র প্রতিশোধের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য।
ইমরান খানের উপর বারবার হত্যাচেষ্টার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই। অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আগাম নির্বাচনের দাবি জানান, যা শেহবাজ শরীফের কাছে গুরুত্বহীন বলে মনে হয়। ইমরান খান ও তার মন্ত্রীসভার পরবর্তী সরকার শেহবাজ খানের সাথে শপথ নিতে অস্বীকার করলে ২০১৮ সাল থেকেই রাষ্ট্রপতি, আরিফ আলভির ক্ষমতা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
নির্বাচন কমিশন ইমরান খানের আগাম নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখ্যান করলে রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন। এছাড়াও ইমরানের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেসকল সিদ্ধান্তগুলোও অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানান রাষ্ট্রপতি।
তাছাড়াও পাকসেনা ও সামরিক সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আইএসআই এর প্রতি আস্থা হারিয়ে সামরিক সংস্থাগুলো প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
আরো পড়ুন: ভুল আদমশুমারির প্রতিবাদে পাকিস্তানে বিক্ষোভ
সামরিক সংস্থার ভূমিকা পাকিস্তানে এতোটাই দৃঢ় যে তারা এখন পর্যন্ত কোনো সরকারকেই পূর্ণ মেয়াদে টিকতে দেয় নি। ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতিতে সামরিক সংস্থার ভূমিকা প্রকাশ্যে আসার পর তারা প্রায় বাধ্য হয়েই ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর এ আশ্বাস প্রদান করে যে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনি অরাজনৈতিক থাকবে।
পাকিস্তানের সরকার এবং বিচার বিভাগ প্রায়ই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং একে অপরের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ অকার্যকর হয়ে পড়লে একটি অভ্যুত্থানের পরিবেশ তৈরি হয়। ইতিমধ্যেই ইমরান খানের নেতৃত্বে এক গণবিক্ষোভের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফরেন পলিসির কলামিস্ট, আজিম ইব্রাহিম বলেন, পাকিস্তানের জনগণ আর সামরিক শক্তিকে ভয় পায় না। দেশটিতে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে চারবার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনৈতিক অবনতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে। দেশটি দ্রুত বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে সামরিক সংস্থা যেকোন সময়েই অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে।
এমএইচডি/আইকেজে
খবরটি শেয়ার করুন