ছবি: বাসস
করদাতার মোট আয় করযোগ্য না হলেও বিশেষ সেবা গ্রহণে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা দিতে হবে না। অর্থ বিলে এ-সংক্রান্ত যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এনেছিলেন, তা প্রত্যাহার করেছেন তিনি। এটিসহ কিছু সংশোধন প্রস্তাব গ্রহণ করে গতকাল রোববার বিলটি কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে পাস হয়েছে। কলমের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাবসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে।
গত ১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থ বিল ২০২৩ উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সংসদ এ বিল অনুমোদন করায় আগামী ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। বিলের তপশিল দুইয়ে ৪৩ ধরনের সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
সেলিম আলতাফ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবল হকসহ জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্য অর্থ বিলের ওপর কিছু সংশোধন প্রস্তাব আনলে তার অধিকাংশ গ্রহণ না করলেও কয়েকটি গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদে গত বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। যাদের করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, তাদের ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর জমা দিতে হবে।
তবে পরবর্তীতে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি আপাতত যৌক্তিক হবে না। করমুক্ত আয়সীমা থাকায় এই ন্যূনতম করের ধারণাটি করনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলেও মত দেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ (পিআরআই) বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংস্থা এ ধরনের কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়।
বল পয়েন্ট কলমের ক্ষেত্রে আগের ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ওই ১০ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে বল পয়েন্টে ভ্যাট আগের মতো পাঁচ শতাংশই থাকছে। সরকারি ও বেসরকারি ৪৩ ধরনের সেবা গ্রহণে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার।
এদিকে বাজেটের সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি। আমাদের অর্থনীতি ভালো আছে। যারা বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের জন্য বলি– আমাদের বর্তমান বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৪ শতাংশ। জাপানে সরকারের ঋণ সে দেশের জিডিপির ২৬১ শতাংশ। বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ঝুঁকি নেই।
অর্থ বিল পাসের সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখনই বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমাবেন, তার পরদিনই দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেটে জড়িত কিনা– এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বাজার একটু নিয়ন্ত্রণে নেন। বাজারে নিয়ন্ত্রণ লাগবে।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ব্যাংক লুট হয়েছে। শ্রীলংকায় খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশ, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশ। এটা সরকারের হিসাব। আইএমএফের হিসাব ধরলে খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমান বাজেটের অর্ধেক। সরকারি হিসাবে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।
আরো পড়ুন: ভিসা নীতি নিয়ে ৭ প্রশ্নের জবাব দিলো মার্কিন দূতাবাস
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের মাধ্যমে লুটেরাদের হাতে ব্যাংক খাত তুলে দেওয়া হয়েছে। দাম্ভিকতার সঙ্গে কালো টাকা সাদা করা মানুষের পকেট কাটার সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটাকে অর্থ বিল না বলে কর বিল বলাই ভালো।
এম এইচ ডি/ আই. কে. জে/