ছবি: সংগৃহীত
জুলাই অভ্যুত্থানের পর মাঠের বিভিন্ন আন্দোলন ও দাবিদাওয়া আদায়ের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মোটামুটি একই পথে হাঁটছিল বলে মনে হচ্ছিল। রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রেই সহাবস্থান নিচ্ছিল দল দুটি। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ যেন দুই দলকে দুই পথে নিয়ে গেল। জামায়াত সনদে স্বাক্ষর করল। স্বাক্ষর করল না এনসিপি।
জামায়াত ও এনসিপি উভয়েই শুরুতে জানিয়েছিল, তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া এতে স্বাক্ষর করবে না। গত শুক্রবার (১৭ই অক্টোবর) সনদ স্বাক্ষরের আগের দিন বৃহস্পতিবার এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এই অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। সেদিনও জামায়াত বলেছে, তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে, কিন্তু সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।
কিন্তু শুক্রবার বিকেলে দেখা গেল, জামায়াতের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন এবং সনদে স্বাক্ষর করলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির একাধিক নেতা জামায়াতের এই পদক্ষেপকে ‘বেইমানি’ বলে অভিহিত করেছেন।
এবার দলটি সম্পর্কে 'নতুন উপলব্ধি'র কথা জানালেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। জামায়াতের কথিত ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) আন্দোলন’ একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাহিদ ইসলাম।
আজ রোববার (১৯শে অক্টোবর) এক ফেসবুক পোস্টে নাহিদ এ কথা বলেছেন। ইংরেজিতে লেখা পোস্টে তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং জাতীয় সংলাপকে গণ–অভ্যুত্থানের আলোকে সংবিধান ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রকৃত প্রশ্ন থেকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এটা (পিআর আন্দোলন) তোলা হয়েছে।
সংবিধানের একটি সুরক্ষা হিসেবেই ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মৌলিক সংস্কারের অন্যতম দাবি ছিল বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের মৌলিক সংস্কার এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদের আইনি কাঠামো তৈরি করার জন্য একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জামায়াত এবং তার সহযোগীরা এটা ছিনতাই করেছে, তারা একে একটি কাঠামোগত পিআর বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে এবং এটাকে তাদের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দর–কষাকষির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।’
জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে ও পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।’
জামায়াতের সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের অধীনে সংস্কারের বিষয়ে তারা আকস্মিক যে অনুমোদন দিয়েছে, সেটা সংস্কার আকাঙ্ক্ষার ফল নয়; বরং একটি কৌশলগত অনুপ্রবেশ। সংস্কারবাদের ছদ্মবেশে একটি রাজনৈতিক নাশকতা।’
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জনগণ এই প্রতারণা স্পষ্টভাবে বুঝে গেছে। তারা সত্যের পক্ষে জেগে উঠেছে এবং আর ভুয়া সংস্কারবাদী বা ছলনাকারীদের দ্বারা প্রতারিত হবে না।’
আল্লাহ ও এ দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ আর কখনোই অসৎ, সুযোগসন্ধানী এবং নৈতিকভাবে দেউলিয়া শক্তিকে তাদের শাসন করার সুযোগ দেবে না বলেও মন্তব্য করেছেন নাহিদ।
খবরটি শেয়ার করুন