শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোলার প্রযুক্তি কৃষি সেচে আনলো বৈপ্লবিক পরিবর্তন

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:২৭ অপরাহ্ন, ২রা জানুয়ারী ২০২৪

#

ছবি-সংগৃহীত

সৌরশক্তি (সোলার) নির্ভর কৃষিপ্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। সনাতন পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে সৌরশক্তি নির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে ছুটছেন এখন প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকেরাও। নীলফামারী জেলার অধিকাংশ মানুষ এখন জীবিকা নির্বাহ করেন কৃষিকাজ করে। নদীর চরের জমিগুলো এক ফসলি হওয়ায় বছরে একটি আবাদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো তাদের। তবে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এখন নদীর বালুময় জমিগুলোকে উর্বর করেছে।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বৃহত্তর নীলফামারী জেলায় এই প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জেলায় সেচ সম্প্রসারণ’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক।

প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা ও সৈয়দপুরসহ মোট ১০টি সোলার চালিত পাম্প বসানো হয়েছে। যে জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে; তিনিই দেখভালের দায়িত্বে আছেন। কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তারাই নিচ্ছেন। এতে কর্তৃপক্ষকে আলাদা কোনো খরচ দিতে হচ্ছে না।

নদীর পানির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানিও উঠানো হয় সেই পাম্প দিয়ে। তারপর সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি যাচ্ছে কৃষি জমির সেচ কাজে। শুকনো মৌসুমে যে এলাকায় স্বল্প পানির চাষাবাদ হয়, সেসব এলাকার কৃষকেরা দারুণ সুবিধা পাচ্ছেন এর মাধ্যমে। এতে নীলফামারী জেলায় কৃষকদের মাঝেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলছেন, অল্প খরচে এই সুবিধায় তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে।

সুবিধাভোগী কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে সেচের অভাবে আমার প্রায় ৫ বিঘা জমি পতিত থাকতো। সোলারের এ সুবিধার পর ফসলে সেচ দেওয়ায় পানির সমস্যা কমেছে। এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি।’

কৃষক ঈশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নদীর চর বালু হওয়ায় পানির ব্যবস্থা না থাকলেও সরকারি সোলারে আমরা সেখান থেকে বিভিন্ন ফসল ফলাতে পারছি। আমি এখানে সরিষা চাষ করেছি। আগে পানির জন্য ফসলের ক্ষতি হতো। সময়মতো পানি মিলতো না। এখন সেই সমস্যা নেই। অল্প খরচে যখন খুশি পানি পাওয়া যাচ্ছে।’

আরো পড়ুন: বিষমুক্ত নিরাপদ লাউ চাষে সফল এই কৃষক

কৃষক আতাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে ২ বিঘা জমিতে আলু ও শাক চাষ করি। আগে জমিগুলোতে কোনো আবাদ হতো না। এখন সৌরশক্তিতে গভীর নলকূপ চলার কারণে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ইচ্ছেমতো পানি তোলা যায়।’

কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘১ বিঘা জমিতে আমি ফুলকপি লাগিয়েছি। বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচের খরচ বেড়েছিল। আমরা এখন অল্প টাকায় পানি দিতে পারি।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নীলফামারী জেলার সহকারী প্রকৌশলী মোসফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ৬ উপজেলায় ১০টি সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। জেলায় ২৫০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। প্রায় ৫০০ কৃষককে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে উত্তরের কৃষি আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। একই সাথে লাভবান হবেন কৃষকেরা।’

এসি/ আই. কে. জে/ 

সোলার প্রযুক্তি সফল কৃষক

খবরটি শেয়ার করুন