সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এফএওর উৎপাদনের হিসাব

২২ কৃষিপণ্যে বিশ্বের শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, ১০ই জুন ২০২৩

#

বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চায়ের মতো পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল। গত এক দশকে কুমড়া, ফুলকপি ও সমজাতীয় সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে। আয়তনে বিশ্বে ৯৪তম দেশ হলেও বাংলাদেশ ফসল উৎপাদনে এগিয়ে। উৎপাদন বাড়ায় আমদানি কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দেশভিত্তিক কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে চিত্রটি দেখা যায়। সংস্থাটি গত মার্চে এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ করে। এতে তথ্য দেওয়া হয় ২০২১ সালের। 

বাংলাদেশ আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের ৯৪তম দেশ। তবে এফএওর হিসাবে দেখা যায়, প্রাথমিক কৃষিপণ্য (শুধু ফসল) উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪তম। শীর্ষে রয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আয়তনে ছোট হলেও কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো। 

এফএওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য ছিল ৩ হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার লাখ কোটি টাকার সমান। উৎপাদনের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৩ লাখ টন। 

এই বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও ভূমির ধরনের কারণে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। নতুন জাত উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকগুলো ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেওয়ার মতো ফলাফল আমরা পাচ্ছি।’

অবশ্য সংরক্ষণের অভাবে আলু, সবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়ে যায় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। 

এফএওর হিসাবে, ২০০১ সালে ১১টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ দশে ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭টিতে। এরপর বিভিন্ন বছরে যোগ হয় আরও পাঁচটি কৃষিপণ্য—পেঁয়াজ, কুমড়া, ফুলকপি ও ব্রকলি (ফুলকপির মতো সবজি), পাখির খাদ্য (বীজ) এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত শিমের বিচি। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে ২২টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

শীর্ষ দশে যেসব পণ্য

এফএও মোট ১৬২টি প্রাথমিক কৃষিপণ্য উৎপাদনের হিসাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ৬৮ ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদনের তালিকায় রয়েছে। এ তালিকায় যেমন একক পণ্য আছে, তেমনি সমজাতীয় ও মৌসুমভিত্তিক কয়েকটি পণ্য মিলিয়ে একটি শ্রেণি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এফএওর হিসাবে, ২০০১ সালে ১১টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ দশে ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭টিতে। এরপর বিভিন্ন বছরে যোগ হয় আরও পাঁচটি কৃষিপণ্য—পেঁয়াজ, কুমড়া, ফুলকপি ও ব্রকলি (ফুলকপির মতো সবজি), পাখির খাদ্য (বীজ) এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত শিমের বিচি। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে ২২টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ কোনো পণ্য উৎপাদনে প্রথম নয়। তবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট, সুপারি ও শুকনা মরিচ উৎপাদনে। চাল, রসুন এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত চিনিজাতীয় ফসলে (যেমন জোয়ার) বাংলাদেশ তৃতীয়। জাম, বরই, করমচা, লটকন ইত্যাদি বেরিজাতীয় ফল এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত সুগন্ধি মসলায় চতুর্থ। মসুর ডাল ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল (কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি) উৎপাদনে বাংলাদেশ ষষ্ঠ। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, বেগুন ও শিমের বিচি  উৎপাদনে। চা ও কুমড়ায় বাংলাদেশ অষ্টম। আম, পেয়ারা ও গাবজাতীয় ফল, ফুলকপি ও ব্রকলি এবং মটরশুঁটি ও পাখির খাদ্য (বীজ) শ্রেণিতে বাংলাদেশের অবস্থান নবম।

অল্প জায়গা নিয়ে উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশে অনেকগুলো ফসল স্থান পাওয়া ভালো খবর। তবে এই খবরে বেশি আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। মাথাপিছু ভোগের হিসাবে চাল ও আলু ছাড়া অন্যান্য ফসলে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি।

প্রধান কিছু ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো। যেমন আলু। দুই দশক আগে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ ছিল ২০তম দেশ। এরপর কানাডা, তুরস্ক, পোল্যান্ডের মতো ১৩টি দেশকে একে একে পেছনে ফেলে ৭ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এফএওর তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ৯৮ লাখ টন।

মরিচ (শুকনা) উৎপাদনে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। এক দশকে চীন ও থাইল্যান্ডকে পেছনে ফেলে মরিচ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন: নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাজারে আসছে রংপুরের ‘হাঁড়িভাঙা আম’

চাল বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। চার দশকের বেশি সময় ধরে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ ছিল চতুর্থ অবস্থানে। ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় অবস্থানে ওঠে বাংলাদেশ। শীর্ষে রয়েছে চীন ও ভারত।

স্বাধীনতার পর মসুর ডালের উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশে ছিল। পরে বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়। অবশ্য এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, রাশিয়া ও চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে উঠেছে।

ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও ভূমির ধরনের কারণে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে।

এম/



কৃষিপণ্য বাংলাদেশ

খবরটি শেয়ার করুন