মা শিরিনা বেগমের সাথে মেয়ে শাহানারা। ছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলায় এক শীতের সকালে মায়ের সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন শাহানারা। ৬ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে হাঁটলেও প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে একসময় হারিয়ে যান তিনি। তন্নতন্ন করে খুঁজেও তার সন্ধান পায়নি পরিবারের সদস্যরা। ৩১ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন শাহানারা।
মেয়েকে খুঁজে না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই কয়েক বছর আগে মারা গেছেন শাহানারার বাবা আলী হোসেন। মা শিরিনা বেগম এত বছর পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে অঝরে কাঁদতে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে চোখের জল আটকাতে পারেনি এলাকাবাসীও।
'তখন শাহানারার বয়স ৬ বছর। ১৯৯২ সালের শীতকালে একদিন সকালে মেয়েকে নিয়ে বাজারে যাই। হাত ধরে থাকলেও এক পর্যায়ে কীভাবে যেন হাত ছুটে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় শাহানারা। অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। দিন-রাত কান্না করতাম। পরে তার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এখন ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তিনি আমাকে আমার হারানো মানিক ফিরিয়ে দিয়েছেন,' শিরিনা বেগম বলেন।
মাকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন তিনি। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'আমি কীভাবে বরিশালে চলে গিয়েছিলাম মনে নেই। সেখানে এক নারী আমাকে রাস্তায় পেয়ে একটি এতিমখানায় রেখে আসেন। সেখানেই আমি বড় হয়েছি। এতিমখানায় আমার নাম দেওয়া হয় "ইয়াসমিন"।'
১৬ বছর আগে এতিখানা কর্তৃপক্ষ শাহানারাকে বিয়ে দেন। স্বামী আব্দুল খালেকের সঙ্গে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠী গ্রামে থাকেন শাহানারা। এই দম্পতির ১৩ বছরের এক মেয়ে ও ৫ বছরের এক ছেলে রয়েছে।
শাহানারা বলেন, '১ মাস আগে স্থানীয় একটি এনজিওর মাধ্যমে মৎস্য বিভাগের একটি প্রশিক্ষণে আমি কলাপাড়ায় আসি। তখন ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের একটি পুকুর পরিদর্শনে অন্যান্য প্রশিক্ষাণার্থীদের সঙ্গে আমি ধুলাসারে যায়। গ্রামটি আমার ভীষণ চেনা মনে হচ্ছিল। আমি বিষয়টি গ্রামের মুক্তাচাষী সুজন হাওলাদারকে খুলে বলি।'
সুজন হাওলাদার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে শাহানারার মা শিরিনা বেগমকে খুঁজে বের করেন।
ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম বলেন, 'অনেক বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন মা। আমরা খোঁজখবর নিয়ে এবং তাদের কথাবার্তা শুনে নিশ্চিত হয়েছি। শাহানারা তার পরিবারকে ফিরে পেয়েছে। আমরা তাদের সুন্দর জীবন কামনা করি।'
আই.কে.জে/