শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘বারি’ জাতে দীর্ঘ হচ্ছে আমের মৌসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা আগস্ট ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

মধুমাস (জ্যৈষ্ঠ) শেষ হয়েছে দেড়মাস আগেই। এ মধুমাস ঘিরে দেশে যেসব ফল পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই ফুরিয়েছে। এখন মিলছে শুধু আম-কাঁঠাল। কাঁঠালও একেবারে শেষ দিকে। বাজারে মিলছেও কম। তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র আমের ক্ষেত্রে। মৌসুমের একেবারে শেষদিকেও বাজারে এখনো আমের সরবরাহ ভালো। আম্রপালি ও বারি জাতের কল্যাণে এখনো মিলছে আম।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে বেশ কয়েক জাতের আম এখনো পাওয়া যাচ্ছে। অন্যবারের চেয়ে আগস্ট মাসে এবার আমের সরবরাহ কিছুটা বেশি। দাম একটু বেশি হলেও যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে, তা স্বাদ-গন্ধে ভালো।

বিক্রেতারা জানান, দুই বছর আগেও এ সময়টাতে (আগস্ট) আম্রপালি ও ফজলি জাতের কিছু আম পাওয়া যেত। বারি আম থাকলেও সরবরাহ খুব কম ছিল। কিন্তু এবার ফজলি কম, আম্রপালি ও বারি আম বেশি। শেষ দিকে জাত ও মানভেদে ৯০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে আম পাওয়া যাচ্ছে। এই দাম তুলনামূলক কম বলে দাবি বিক্রেতাদের।

যেসব এলাকা থেকে তারা (ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা) আম আনছেন, সেখান থেকে আরও আম পাঠাতে চাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা- আরও ১০ দিন আম্রপালি এবং একমাস বারি জাতের আমের ভালো সরবরাহ পাওয়া যাবে।

দুই বছর আগেও আগস্টে আম্রপালি ও ফজলি জাতের কিছু আম পাওয়া যেত। বারি আম থাকলেও সরবরাহ খুব কম ছিল। কিন্তু এবার ফজলি কম, আম্রপালি ও বারি আম বেশি

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকার বাদামতলী, মিরপুর-১ এর শাহ আলীর মাজারের পাশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো এসব বাজারে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ থেকে আম আসছে। মৌসুম শেষের দিকে হলেও এখনো আমের বেচাকেনা ভালো।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারেও মিলছে পর্যাপ্ত আম। গুলিস্তান, রামপুরা কাঁচাবাজার, মধ্যবাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুনবাজার, মহাখালী আমচত্বর, মিরপুর এলাকায় ফলের দোকানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে আম্রপালি। এসব আম্রপালির ৯০ শতাংশই নওগাঁর সাপাহার থেকে আনার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আম্রপালির পরই বাজারে বেশি মিলছে বারি-৩, বারি-৪, বারি-১১, বারি-১২ বা গৌড়মতি জাতের আম। তবে সব আমই ‘বারি আম’ বলে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

খুচরা বাজারে আম্রপালি ও বারি আম মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফজলির কেজিও ১৫০ টাকা। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্যানানা আম। এছাড়া আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এরপর কাটিমন জাতের কিছু আম আসবে। সেগুলো ৩০০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যাবে না বলে জানান বিক্রেতারা।

আম্রপালি ও বারি আম মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফজলির কেজিও ১৫০ টাকা। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্যানানা আম। এছাড়া আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

ফল ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘এখন ফজলি নেই। আগে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রচুর ফজলি আম আসতো। শেষ দিকে ফজলি ও আশ্বিনা আম দিয়ে আমের সিজন (মৌসুম) শেষ হতো। এখন বারি আমের ছড়াছড়ি। বারি এখনো মাসখানেক পাওয়া যাবে। তবে দাম আরও বাড়বে।’


ছবি: সংগৃহীত

নতুন কয়েকটি জাত উদ্ভাবনে দেশে আমের মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফল গবেষকরা। অর্থাৎ অসময়েও বাজারে আমের সরবরাহ অনেকাংশে ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বারি-৪ ও বারি-১২ আম শ্রাবণ-ভাদ্র মাসেও পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে বারি-১২ আম ‘গৌড়মতি’ নামে পরিচিত। এছাড়া কাটিমন জাতের আমের চাষও বাড়ছে, যা বছরে তিনবার ফলন হয়।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমের মৌসুমটা বড় হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা তো একদিনের বিষয় না। তবে বারি জাতের আম মৌসুম বড় করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। শুনছি, এখন কাটিমন জাতের আম নিয়েও ফল গবেষণা কেন্দ্র তৎপর। সেটা করা গেলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসেও আম পাওয়া যাবে।’

আরো পড়ুন: জাহাজ নির্মাণ খাতে নেদারল্যান্ডসকে জমি দেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আরও কয়েকমাস অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাতে আম পাওয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কাটিমন জাতের আম নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। তাহলে দেখা যাবে, ফেব্রুয়ারিতেও বাজারে আম পাওয়া যাবে।’

এম/


আম রাজশাহী

খবরটি শেয়ার করুন