সোমবার, ২৬শে আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১১ই ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরুর গলায় সোনা-রুপা গয়না পরিয়ে, পালকি করে বউ আনতে গেলেন বর

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, ২২শে অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় বেঁধে দেওয়া হয় গরুর গলায়। পরে সেই গরু ছেড়ে দেওয়া হয় গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে। গরুটি যিনি প্রথমে পাবেন বা কারও বাড়িতে উঠলে সেটি তার হবে। তবে, কোনও আত্মীয়স্বজনের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া, তিনদিন ধরে চলে মাদারের (আঞ্চলিক ভাষা) পালা গান। একইসঙ্গে চলে খাওয়া-দাওয়া। এরপর পালকিতে চড়ে পুরো গ্রাম ঘুরে কনের বাড়িতে যান বর।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এভাবেই পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা নদীপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের (৩২) ব্যতিক্রমী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। টানা পাঁচ দিনব্যাপী এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলে। এলাকাবাসীর মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। পালকিতে চড়ে বর সাইফুল যখন কনের বাড়িতে গেলেন, তখন শত শত উৎসুক মানুষের ভিড় জমে একনজর দেখতে।

সরেজমিন গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের বাবা খাদেমুল ইসলাম ছিলেন ব্যবসায়ী। মা খোদেজা বেওয়া গৃহিণী। খোদেজা বেওয়া বিয়ের পর একে একে জন্ম দেন ৮ সন্তান। কিন্তু জন্মের ৩ থেকে ৫ বছর বয়সে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সব সন্তানই মারা যায়। একটা সন্তানের আশায় পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন খোদেজা বেওয়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার।

এরপর ময়না খাতুন পার্শ্ববর্তী নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে জানতে পারেন সেখানকার ‘শীতলী চরলালি মসজিদে ভেজা কাপড়ে গিয়ে আল্লাহর কাছে মানত করলে মনোবাসনা পূরণ হয়। ওই মসজিদটি একরাতে সেখানে গড়ে ওঠে।’

লোকমুখে শুনে ময়না খাতুন ওই মসজিদে গিয়ে ভেজা কাপড়ে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বলেন, ‘যদি ছেলে বউয়ের কোনো সন্তান হয় এবং বেঁচে থাকে তবে সেই সন্তানের বিয়ের সময় সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় গরুর গলায় বেঁধে গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে হবে মাদারের তিন পালা গান (আঞ্চলিক গান) এবং পালকিতে চড়িয়ে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে বিয়ে করানো হবে সেই সন্তানকে।

এর কিছুদিনের মধ্যেই সাইফুল ইসলামের জন্ম হয়। শুধু সাইফুলই নয়, তার মা খোদেজা বেওয়ার কোল আলো করে পর পর জন্ম নেয় আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবারে বইতে থাকে খুশির বন্যা। এর মধ্যে কেটে গেছে ৩২ বছর। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন সাইফুলের দাদি ময়না খাতুন ও বাবা খাদেমুল ইসলাম। অবশেষে দাদির সেই ওসিয়ত রাখতেই নানান আয়োজনের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সাইফুল ইসলাম। কনে একই উপজেলার বরদানগর মরশিন্দা গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়ার মেয়ে মায়া খাতুন।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে বিয়ে করতে যাওয়ার আগে সাইফুল ও তার মা খোদেজা বেওয়া সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় একটি গরুর গলায় বেঁধে ছেড়ে দেন। বরযাত্রীদের খাসির মাংস দিয়ে খিচুড়ি খাওয়ার আয়োজন করা হয়। এরপর পালকিতে চড়ে বাদ্য-বাজনাসহ পুরো গ্রাম ঘুরে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যান সাইফুল। পাড়া-প্রতিবেশীও হই-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন। গ্রাম জুড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। সন্ধ্যার দিকে নদীর পাড় হয়ে সাইফুলকে নিয়ে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন বরযাত্রীরা। সেখানে শেষ হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

আলাপকালে সাইফুল ইসলাম বলেন, দাদির ওসিয়ত রাখতে এইভাবে বিয়ের আয়োজন করতে হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে খুবই আনন্দ হয়েছে। আর পালকিতে চড়ে বিয়ে করা শুধু শুনেছি এবার নিজে সেই আনন্দ উপভোগ করলাম।’

সাইফুলের মা খোদেজা বেওয়া বলেন, ‘আমার শাশুড়ি বেঁচে থাকতে এই ওসিয়ত করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে আমাকে বলে যান ছেলের নাম সাইফুল থাকবে। আর যেভাবে যা বলেছি, সব ঠিকমতো পালন করবে। তার সেই ওসিয়ত আমি পূরণ করলাম। আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেছেন, সন্তানদের সুস্থ রেখেছেন। আমরা খুব খুশি।’

ওআ/

বর

খবরটি শেয়ার করুন