ছবি-সংগৃহীত
দেশের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। গানের পাশাপাশি এই শিল্পীর রয়েছে একাধিক প্রতিভা। তিনি কবিতা, প্রবন্ধও লিখেন। সামাজিকমাধ্যমেও নানা বিষয়ে নিজের লেখা প্রকাশ করেন। তার লেখা পড়ে তার ভক্তরাও বেশ প্রশংসা করেন।
সম্প্রতি এমনই একটি লেখা অনুরাগীদের সঙ্গে শেয়ার করে নিলেন এই সঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গে যুক্ত করেছেন একটি পুরনো ছবি। আর এর ক্যাপশনের লেখাটি স্মৃতিচারণমূলক।
এতে তিনি লেখেন, ১৯৮৪ সালের পাঁচই ডিসেম্বর! ৩৯ বছর আগের এই দিনের গল্প! সেদিন আমার গায়ে হলুদ ছিল। আমি জন্মগতভাবেই একই সাথে অপরিপক্ক আবার পরিপক্ক ছিলাম। ছিলাম বা আছি ইন্ট্রোভার্ট আবার এক্সট্রোভার্ট! অনেক কিছু বুঝতাম আবার অনেক কিছু বুঝতাম না।
বিয়ে হচ্ছে এতে যত না খুশি তারচেয়ে বিয়ের কন্যা সাজতে পারছি এটাই ছিল যেন বেশি আনন্দের। খুব ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল। যেখানে বসে আছি ওটা আমার শোবার খাট। অর্ধেক বাঁশের বেড়া আর অর্ধেক টিন দিয়ে গড়া বাবার নিজের বাড়ি।
বিছানার দুপাশে দুটি জানালা ছিল। দক্ষিণ ও পশ্চিমের জানালা, এখান দিয়েই কত আকাশ দেখেছি, কত স্বপ্ন এঁকেছি, জানালার পাশেই জলটলটলে পুকুরে ডুবসাঁতার খেলেছি, বেড়ার ফাঁকের আলোর ফুলের সাথে কত খেলেছি অথবা সেই আলোর নাচন আমাকে ভোরবেলা জাগিয়ে দিয়েছে।
পশ্চিম দিকের পুকুরে ডুব দিলে আমার বিশাল চুল ছড়িয়ে ভেসে চুলের ফুল তৈরি হতো, এখনকার দিনে হলে ড্রোন দিয়ে ছবি তোলা যেতো কিন্তু তখনই আমি তা কল্পনায় দেখেছি, আহা!
শাল কাঠের খুঁটিতে হলুদ লাল কাগজ আমার নিজের হাতে আঠা দিয়ে লাগানো। বিয়ে হচ্ছে এজন্য কোনও লাজলজ্জার বালাই ছিল না। বরং দুশ্চিন্তা ছিল আমাকে সাজানোর জন্য ফুল পাওয়া যাবে কই! হলুদে যে গান গায় সেই গানও কেউ পারে না।
গায়ে হলুদের দিন সকালে রত্নাপা কয়েকজনকে শিখাচ্ছিলেন। তাতেও ভুল হচ্ছিল দেখে আমি গলা মিলাচ্ছিলাম। পারুল আপা যতই ধমক দিয়ে আমাকে থামিয়ে দেন আমি ততই জোরে গাই, কী যন্ত্রণা! শেষে আম্মা বললেন ওই পাগলি গাক, তোরা কিছু বলিস না, কী হবে গাইলে!
হলুদ মাখিয়ে যখন খালা বোনরা ফুল ভেজানো পানিতে গোসল করাচ্ছিলেন তখনই প্রথম আমার কান্না পেলো। গোসলের পানির ভেতরেই কেঁদে নিলাম আরাম করে। কারণ কেউ তা টের পেলো না।
আরো পড়ুন: সম্মান দিয়ে বিয়ে করে সংসার করার মতো লোকের অনেক অভাব : সুবহা
সে কান্না বিয়ের জন্য নয়, প্রমিজ, আমি কাঁদছিলাম আমার দ্বিতীয় গোসলের জন্য! ভাবছিলাম যে আমার জীবনে বাদ রইলো শেষ গোসল! কিছুক্ষণ পরেই মন খারাপ কেটে গেলো। জুবলীমামী চুল আঁচড়ে শুকিয়ে দিচ্ছিলেন। খুবই আশ্চর্য যে ক্যামেরার এই রিলে শুধু এ সিনেমাটিই পাওয়া গেছে। আর সব ছবি হাওয়া।
রাতে মামি, রত্নাপা, আর শিরী খালাম্মা হাতে ঝাঁটার কাঠির ডগায় বাটা মেন্দি লাগিয়ে ফুল লতাপাতা এঁকে দিচ্ছিলেন। তাকে ফুল লতাপাতা না বলে কাকের ঠ্যাং বকের পাখনা বলাই ভালো।
সেই মেন্দির ডিজাইন দেখে মনে হচ্ছিল বিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাই। কিন্তু আবার এখনকার বিয়ের কন্যাদের অর্থাৎ সিমেন্টের বউ অথবা আটা ময়দা সুজির বউদের দেখলে মনে হয় ওই সরল আঁকা মেন্দির ফুলে কতই না আশীর্বাদ লুকানো ছিল!
বয়স আমার হয়েছে ভালোই, নানি-দাদি ও হয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ কিন্তু খুব সুন্দর করে গায়ে হলুদের সাজ সাজার আফসোস আমার রয়েই গেছে। জীবনও একটাই, বিয়েও একবারই।
তারপরও এই একটি ছবিই আমার কাছে হীরার মতো দামী!
এসি/ আই. কে. জে/